২৪তম বিশ্ব পেট্রোলিয়াম কংগ্রেসে (ডব্লিউপিসি) প্রতিনিধিরা বলেছেন, জ্বালানি নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে সৃষ্ট নতুন অনিশ্চয়তা এবং ভিন্ন খাতের প্রতি অগ্রাধিকার জ্বালানী খাতের ক্রান্তিকাল উত্তরণের গতি ও দিক নির্দেশনা মন্থর করবে।
তারা বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানি প্রবাহে ব্যাঘাত সরকারগুলোর জন্য নতুন প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে এবং এই জ্বালানি জাতীয়তাবাদের একটি এজেন্ডাকে ত্বরান্বিত করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশ ও অঞ্চলগুলো তাদের জ্বালানী সরবরাহ রক্ষা করার উপায় অনুসন্ধান করছে।
ইউরেশিয়ার গ্রুপের জালানি বিষয়ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাদ আলকাদিরি গতকাল (২০ সেপ্টেম্বর) সমবেত দর্শকদের বলেন, ‘কিন্তু জ্বালানি নিরাপত্তার অগ্রাধিকারগুলোর ব্যাপারে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্নমত রয়েছে। আর এই ভিন্নমত বা ‘অনৈক্য’ জলবায়ু পরিবর্তন এবং শক্তির পরিবর্তন মোকাবেলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে ব্যহত করতে পারে।’
বিভিন্ন বাজারে জ্বালানি নিরাপত্তার অর্থও ভিন্ন হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, গ্যাসোলিন সস্তা। কিন্তু আবার চীন ও ভারতে, জ্বালানি পাওয়া গেলেও বেশ দামি। সৌদি আরবে, এটি চাহিদার নিরাপত্তা।’
এই বিশ্লেষক আরো বলেন, এই প্রারম্ভিক পয়েন্টগুলো- যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও রাজনৈতিক কর্মকা-কে প্রভাবিত করে, একে অপরের সাথে বিরোধপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, ‘এই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই সরকার মূলধন বরাদ্দ করে এবং বাজারে তারা সংকেত দেয়।’
তিনি সৌদি আরব এবং অন্যান্য প্রধান তেল উৎপাদকদের উদাহরণ দিয়েছেন, যারা ‘ক্লিন আপ দ্য ব্যারেল’ দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, অপারেশনে দক্ষতা বাড়াচ্ছে। এর ফলে তাদের উৎপাদনের কার্বনের তীব্রতা হ্রাস করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং স্থানীয় সরকারগুলো আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে গিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির র্যাম্প আপের মাধ্যমে পুনরায় শক্তি সরবরাহের জন্য চাপ দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এই পার্থক্যগুলো একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন করে তোলে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- এখান থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বহীনতা আছে।’
অর্থদাতারা বিশেষভাবে ঝুঁকি বিমুখ হওয়া সত্ত্বেও নেতৃত্বের এই শূন্যতা পূরণ করতে হবে। কারণ, জ্বালানির মূল্য হ্রাসের জন্য কাক্সিক্ষত উৎপাদন অর্জন করতে এই শিল্পে মূলধন প্রয়োজন।
এছাড়াও, ইন্দোনেশিয়ার বিশ্বের অন্যতম প্রধান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিকারক হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়ার তেল ও গ্যাস বিষয়ক মহাপরিচালক তুতুকা আরিয়াজাদি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া বৃহৎ আবাদির (আবাদি এলএনজি টার্মিনাল, ইন্দোনেশিয়ায় মাসেলা এলএনজি প্রকল্প নামেও পরিচিত) রপ্তানি প্রকল্প এবং আন্দামান প্রকল্পের মতো সম্ভাব্য নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে এর এলএনজি খাতে প্রস্তাবিত বৃদ্ধির প্রশংসা করেছে।’
আরিয়াজাদি ইন্দোনেশিয়ার কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ প্রশংসাপত্র উপস্থাপন করে বলেন, তিনি ইন্দোনেশিয়া উৎপাদনের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট এবং আন্দামান এলাকায় হারবার জ্বালানি দ্বারা প্রস্তাবিত এলএনজি রপ্তানি পরিকল্পনার সম্পূর্ণ সমর্থন করছেন।
তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া সরকার একটি এলএনজি স্কিম বিকাশের জন্য হারবারের উচ্চাকাক্সক্ষাকে সমর্থন করে।
তিনি আশাবাদী যে আন্দামান এবং আবাদি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতির জন্য সর্বশেষ নতুন এলএনজি উন্নয়ন হবে না। এরপরও আরো এলএনজি উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশটিতে প্রচুর গ্যাস মজুর আছে। এই পশ্চিমাঞ্চলে বিপি ও অন্যান্যরা অনুসন্ধান পরিকল্পনা করছে। সেখানে আরো প্রচুর পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় ৬০টির বেশি স্থানে জ্বালানি উৎপাদন বন্টন চুক্তি রয়েছে। যেখানে এখন পর্যন্ত কোনো অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়নি।
বিপি’র নেতৃত্বাধীন তাংগুহ সিসিইউএস প্রকল্পটি সবচেয়ে উন্নত। ২০২৬-২০২৭ সালে এখানে প্রথম ইনজেকশনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে উল্লখ করেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৩০% হ্রাস করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে নিট শূন্যে চলে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
ইতোমধ্যে, ব্রাজিলিয়ান ড্রিলিং প্লেয়ার ফরেসিয়া রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত তেল জায়ান্ট অফশোর ব্রাজিলে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পেট্রোব্রাসের সাথে একটি ড্রিলশিপের জন্য একটি নতুন চুক্তি করেছে।
ফোরেসিয় পেট্রোব্রাসের সাথে একটি ৪০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন রিগ চুক্তি এবং নোরবে ৮ এর সাথে ড্রিলশিপ করেছে-যা ২০২৪ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে একটি নতুন চার্টার শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৫:২৫ ৪৬ বার পঠিত