রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ঢাকায় আসছেন আজ (বৃহস্পতিবার)। এদিন বিকেলে তিনি ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার ঢাকা সফর নিয়ে মহাকর্মযজ্ঞ চলছে বাংলাদেশের কূটনীতির অঙ্গনে। কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় আসার ঘটনা এটাই হবে প্রথম।
মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়েছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরে মস্কোর কোনো প্রতিনিধি ঢাকা সফর করেননি। নির্বাচনকে সামনে রেখে যখন পশ্চিমাদের নানা তোড়জোড়, এমন সময় মার্কিনবিরোধী অবস্থান নেয়া রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ঢাকা সফরে আসছেন।
পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের বৈশ্বিক এলিট মঞ্চে বাংলাদেশকে জায়গা করে দেয়া মহাস্থাপনার নাম ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। নানা চ্যালেঞ্জ আর সংকট পেরিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুরের নির্মাণযজ্ঞে কারিগরি ও আর্থিক দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সহযোগী মুক্তিযুদ্ধকালের পরম বন্ধু রাশিয়া।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকায় পৌঁছে সের্গেই ল্যাভরভ সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বসবেন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে। পরদিন শুক্রবার সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, দুই দেশের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা ইস্যু। নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনাসহ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ রাশিয়াকে অনুরোধ জানাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে যাবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত বছর নভেম্বরে ঢাকা সফরের কথা উঠলেও শেষ মুহূর্তে আসতে পারেননি ল্যাভরভ।
এদিকে, ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর নিয়ে সরগরম বাংলাদেশের কূটনীতির অঙ্গন। দুটি সফরই ঢাকার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, প্রায় ৩৩ বছর পর ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন; আর কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় আসার ঘটনা এটাই প্রথম।
কৌশলগত দিক থেকে এ দুটি সফরই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলা আর কৌশলগত কারণে বিশ্বনেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফর বাংলাদেশে দেশটির বিনিয়োগ টানতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তারা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, জি-২০ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে আসবে। এ সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এ সফরের দিকে অন্য দেশের নীতিনির্ধারকদেরও নজর থাকবে। এটা একটা বড় বিষয়। এতে অন্য দেশও কিন্তু সমানভাবে গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করবে।
উচ্চ পর্যায়ের এসব সফরকে বিনিয়োগ টানাসহ নানা ক্ষেত্রে নিজেদের অনুকূলে নেয়ার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারে ঢাকা, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগেরও একটি সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা কোন কোন দেশের সঙ্গে কোন কোন খাতে এ সুযোগ কাজে লাগাব সেটিও বিবেচনা করতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের এসব সফরের মধ্যেই আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ভারতে জি-২০ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে অতিথি রাষ্ট্রের সরকারপ্রধান হিসেবে একই মঞ্চে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩০:৫৫ ৩৮ বার পঠিত