সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যার কথা ভেবেছেন উত্তম!

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যার কথা ভেবেছেন উত্তম!
সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩



জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যার কথা ভেবেছেন উত্তম!

দুই বাংলার দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে যে নায়ক তিনি উত্তম কুমার। সুদর্শন এ নায়কের ভক্তদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। পাঁচের দশক থেকে আজও অনেক নারীরই হার্টথ্রব এ মহানায়ক। কিন্তু আপনি কি জানেন, সুদর্শন এ নায়কের হার্টথ্রব কে ছিলেন?

কার জন্য প্রায়ই নায়কের হৃদয় দুলে উঠত, কার খেয়ালে থেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলতেন ভাবনার সাগরে? সেই নায়িকার নাম সাবিত্রী চ্যাটার্জী। পাঁচের দশকে নায়িকা সাবিত্রীর সঙ্গে একই সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে ভালো লাগার শুরু। ১৯৫১ সালে ‘সহযাত্রী’ সিনেমায় প্রথম কাজ শুরু করেন উত্তম আর সাবিত্রী।

ওই সময় তখনও উত্তম কুমার নায়ক হিসেবে ওতটা জনপ্রিয়তা পাননি। সাবিত্রীরও সেটি ছিল প্রথম সিনেমা। জনপ্রিয়তার স্বাদ পাওয়ার আগেই যেন প্রেমের ভাবনায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ে অরুণ ( উত্তম কুমারের আসল নাম)।

কিন্তু প্রথমদিকে কখনই তা প্রকাশ করেননি অভিনেতা। ভালোবাসাকে সবার কাছে বুঝিয়েছেন সহশিল্পীর প্রতি শুধুই ভালো লাগা।সাবিত্রীর বিপদে প্রায়ই বাড়িয়ে দিতেন সহযোগিতার হাত। দেখা হলে জিজ্ঞাস করতেন, কেমন আছিস?

কারণ মাত্র ২১ বছর বয়সেই উত্তম কুমার গৌরী দেবীকে বিয়ে করেন। ১৯৪৮ সালের ১লা জুন বিয়ে করার প্রায় তিন বছর পর সাবিত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় উত্তমের।

দিন যত গড়িয়েছে ততই উত্তমের সাবিত্রীর প্রতি ভালো লাগার গভীরতা বেড়েছে। একে একে সাবিত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন অনেক সুপারহিট সিনেমায়। অভিনেত্রী হিসেবেও সাবিত্রীকে পছন্দ করতে শুরু করেন এ অভিনেতা।

ধীরে ধীরে সাবিত্রীও দুর্বল হতে শুরু করেন উত্তমের প্রতি। কিন্তু অন্যের ঘর ভেঙে নিজের ঘর কখনও গড়তে চাননি সাবিত্রী। তাই উত্তমকে প্রায়ই এড়িয়ে চলতেন নায়িকা।

ঠিক করেছিলেন, অন্য কাউকে বিয়ে করে উত্তমের প্রতি ভালো লাগার পার্টের ইতি টানবেন। সাবিত্রীর পরিবার যখন বিয়ের পাত্র দেখা শুরু করেন তখনই সরাসরি নায়িকাকে নিজের ভালো লাগার কথা জানান উত্তম।

সেই প্রস্তাব ফিরিয়েও দেন সাবিত্রী। এক অনুষ্ঠানে সাবিত্রী এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আমার প্রতি উত্তম বরাবরই পজিটিভ ছিলেন। এ কারণে আমার অনেক সম্বন্ধই ভেঙে দিয়েছে উত্তম।

টালিউডে এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠে, উত্তম কুমার নাকি সাবিত্রীকে বিয়ে করে বালিগঞ্জে বাড়ি ভাড়া করে আছেন। এ গুঞ্জনে সাবিত্রীর জীবনে বড় এক ঝড় আসে। সে ট্র্যাজেডির কথা স্বীকার করলেও কী ট্র্যজেডি ঘটেছিল সে কথা কখনই মিডিয়ার সামনে স্বীকার করতে চাননি অভিনেত্রী।

এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী শুধু বলেন, যে কষ্ট একান্তই আমার, তা আমারই থাক। এখন পর্যন্ত জানা যায়নি, সাবিত্রী আর উত্তমের বিয়ের গুঞ্জন কে ছড়িয়েছিল মিডিয়ায়?

এদিকে উত্তম বিবাহিত জীবনে মোটেও সুখী ছিলেন না। স্ত্রী গৌরীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হত অভিনেতার। এরই মাঝে জীবনে টুইস্ট আসে উত্তমের জীবনে। গুঞ্জন উঠে, সুচিত্রা- উত্তম আবার কখনও সুপ্রিয়া- উত্তমের গভীর প্রেমের।

এদিকে সাবিত্রী উত্তমকে ভালোবাসার পরেও তাকে ফিরিয়ে দেন। কারণ কারো ঘর ভাঙার পক্ষে তিনি কখনই ছিলেন না। তাই সাবিত্রীকেও আর কখনও বিরক্ত করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন উত্তম। এরই মধ্যে ১৯৬৩ সালে হঠাৎই একদিন স্ত্রী গৌরীর জন্মদিনে তুমুল ঝগড়া হয় উত্তম- গৌরীর। ওই ঝগড়ার পর উত্তম পরিবার ছেড়ে চলে যান বন্ধু সুপ্রিয়ার বাড়িতে।

উত্তমের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার বিষয়টি তখন সুপ্রিয়াই বুঝেছিলেন। কারণ পারিবারিক কলহে ১৯৫৪ সালে সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে স্বামী বিশ্বজিতের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাই রাগ করে ঘর ছেড়ে সুপ্রিয়ার কাছেই আশ্রয় চেয়েছিলেন মহানায়ক।

উত্তমের নিজের লেখা আত্মজীবনী ‘আমার আমি’ বইতে উত্তমকুমার লিখেছিলেন, সুপ্রিয়া দেবীর সেবাযত্নে কীভাবে তিনি ধীরে ধীরে সব যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠছিলেন।

কীভাবে সুপ্রিয়া দেবীর আশ্রয় তাকে শান্তির খোঁজ দিয়েছিল। তবে মহানায়ক তার আত্মজীবনীতে একটিা বিষয় স্পষ্ট করে লিখতে ভোলেননি, আর তা হলো তিনি সুপ্রিয়া দেবীকে ঠকাতে চাননি।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর সুপ্রিয়া দেবীর বাড়িতেই কাটিয়েছেন এ মহানায়ক। কিন্তু তাদের বিয়ে হয়নি। বিয়ে না হওয়ার কারণ প্রথম স্ত্রী গৌরীকে তিনি অফিসিয়ালি ডিভোর্স দেননি।

সাবিত্রীর জন্য উত্তম যে ঘর নিজের হাতে ভাঙতে চেয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত সে ঘরই কেন টিকিয়ে রাখলেন উত্তম? স্ত্রীকে কেনই বা দিলেন না ডিভোর্স? কেনই বা মনের শান্তির খোঁজে প্রথম স্ত্রীর থেকে অনেক দূরে চলে গেলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত?

তবে কি জীবনের শেষ পর্যন্ত সাবিত্রীর ‘কারো ঘর না ভাঙার’ ইচ্ছাই নিজের ব্রত বানিয়েছিলেন এই মহানায়ক? নিজের ইচ্ছাকে গলা টিঁপে মেরে অন্যের ইচ্ছা সত্যি করার জন্য সব কষ্ট ভুলে থাকতেন অ্যালকোহলের গ্লাসে!

এদিকে উত্তমকে ভালোবাসার কারণেই কি জীবনের ৮৬ টি বসন্ত নষ্ট করলেন সাবিত্রী? বাংলাদেশের কুমিল্লার কমলাপুর গ্রামের মেয়ে অভিনেত্রী সাবিত্রী আজও বিয়ে করেননি কেন, সে প্রশ্নের বিশ্বাসযোগ্য উত্তরও অজানাই থেকে গেছে সম্পর্কের জটিল সমীকরণে!

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৮:২৩   ৪২ বার পঠিত