বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩

ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলে পপি চাষ, তদন্তে মিললো ভয়ঙ্কর তথ্য

প্রথম পাতা » চট্রগ্রাম » ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলে পপি চাষ, তদন্তে মিললো ভয়ঙ্কর তথ্য
বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩



ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলে পপি চাষ, তদন্তে মিললো ভয়ঙ্কর তথ্য

মিয়ানমার-থাইল্যান্ড-লাওসের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল নয়। এবার ভারতের মিজোরাম-মিয়ানমারের চিনহিল-ইরাবতী নদী এবং বাংলাদেশের বান্দরবান অংশ নিয়ে গঠিত ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলে হচ্ছে হেরোইন এবং আফিম তৈরির মূল উপকরণ পপি চাষ।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ট্রানজিট করে বিদেশে পাচার হচ্ছে এখানে উৎপাদিত আফিম । পাশাপাশি হেরোইন পাচারেও ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কুকিচিন-আরাকান আর্মির মতো অন্তত ৭টি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে মিয়ানমার, ভারত এবং বাংলাদেশের দুর্গম সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে। এখানেই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করছে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। আর এ সুরক্ষিত অঞ্চলকে মাদকের আখড়া বানিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের চিন হিল, আরাকান পাহাড় রেঞ্জ ও মাইয়ু পাহাড়ের মধ্যবর্তী এলাকার পাশাপাশি ভারতের মিজোরাম এবং বাংলাদেশের বান্দরবান ও বঙ্গোপসাগরের কিছু অংশ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল। এর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের ইরাবতী নদী, কালাধান নদী, মংডু-বুচিঢং এবং রাখিঢং অঞ্চল। পুরো এলাকাটি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশ কিংবা ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।

চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবীর খন্দকার বলেন, বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রুপ তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ জন্য মাদককে তারা অর্থ সংগ্রহের একটি উপকরণ হিসেবে দেখছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম চালাতে তাদের প্রচুর অস্ত্রের দরকার হয়; রকেট লাঞ্চার থেকে শুরু করে সব অস্ত্রই আরাকান আর্মির রয়েছে। তাদের অর্থের উৎস হলো ইয়াবা ও মাদক পাচার। ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলে এখন আফিম চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা রুমা, থানচি, রোয়াইছড়ির ৮৭ একর জমিতে লাগানো পপি ধংস করা হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাহাড়ি কৃষকদের পপি চাষে উৎসাহ করছে; কখনো আবার তাদের চাপও দিচ্ছে।

র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুবুল আলম জানান, ভারতের মিজোরাম, মিয়ানমারের চিনহিল-ইরাবতী নদী এবং বাংলাদেশের বান্দরবান অংশ নিয়ে গঠিত ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলে হচ্ছে হেরোইন এবং আফিম তৈরি পপি চাষ। এ ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গালে চাষ হওয়া পপি থেকে উৎপাদিত আফিম চলে আসছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে গত বছর র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১০ কেজি আফিম। আর গত তিন বছরে অন্তত একশ একর পপি ক্ষেত ধ্বংস করা হয়েছে ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গালে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা জানান, হেরোইনের কিছু চালান বিজিবি, পুলিশ বা কোস্টগার্ড জব্দ করছে। হেরোইন পাচারের ক্ষেত্রেও চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারকে ট্রানজিট রুট হিসাবে ব্যবহার করে বাইরের দেশে পাঠানো হচ্ছে বলে বের হয়ে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে। গত দুমাসে ৫টি চালানে অন্তত ৭ কেজি হেরোইন জব্দ করেছে বিজিবি।

ত্রিদেশীয় সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের এ ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গালে সন্ত্রাসীদের অবস্থান এবং মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার তথ্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১:২২:৪৬   ৪৬ বার পঠিত