আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কবির পরিবার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সব স্তরের মানুষ।
রোববার (২৭ আগস্ট) সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়।
সকালে প্রথমেই বিদ্রোহী কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ, জাসাস, বাংলাদেশ কৃষকলীগ, বঙ্গবন্ধু শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুবলীগসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তি ও সংগঠন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর দলের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানান ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতাকর্মীরা। বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
১৯৭৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলার বুলবুলি। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।
কাজী নজরুল ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
বাংলাসাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তবে নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাসংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
কাজী নজরুলের ইসলামের কবিতা, গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতা সংগ্রামে পথ দেখিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস, এগিয়ে যাওয়ার ব্রত।
নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্মবাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল । জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন তিনি। আজও তার কবিতা, গান মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
চির প্রেমের কবি, যৌবনের দূত ছিলেন নজরুল। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। অনায়াসেই বলছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি দেন।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি’লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কবিকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৪:২৯ ৪৪ বার পঠিত