কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে এই দৃশ্য দেখা যায়।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, কাঁচা রাস্তা ও কালভার্ট ভেঙে গেছে। বেড়িবাঁধ, ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন কেউ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভেসে গেছে বীজতলা, ফসলের মাঠ ও মাছের ঘের। গেল মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে বুধবার (৯ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টি হয়নি। ভোরে ও দুপুরে হালকা বৃষ্টি হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। তবে পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফেরা মানুষদের মধ্যে নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাড়িতে রান্না করে খাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। বুধবার সকালে চকরিয়া উপজেলায় পানিতে ডুবে থাকা কিছু সড়কে ভাঙনের তীব্রতা চোখে পড়ে। কাকরা-মিনাবাজার সড়কটির তিন কিলোমিটার এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি স্থান ভেঙে গেছে। সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এদিকে চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের পরিস্থিতিও একই। মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও রামু থেকেও নানা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ওই এলাকার জহিরুল হাসান জানান, চার দিন ধরে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ফুট পানিতে বন্দি ছিলেন তারা। বুধবার সকাল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সড়কের ভাঙনের পাশাপাশি ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেলেও সেখানে রান্না করার সুযোগ নেই। খাবার পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশ ভেঙে গেছে। মাতামুহুরী নদীর নিকটবর্তী গ্রামের বসতঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। চকরিয়া ও পেকুয়ায় বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ চলছে। প্রাথমিক যে তথ্য হাতে এসেছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ দুই কোটি টাকার বেশি। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, বন্যা কবলিত এলাকার মধ্যে চকরিয়া-বদরখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ৬ কিলোমিটার, ইয়াংগা-মানিকপুর-শান্তিবাজার সড়কের ১১ কিলোমিটার, লক্ষ্যারচর-বেথুয়াবাজার-বাগগুজারা সড়কের ১১ কিলোমিটার, একতাবাজার-বনৌজা শেখ হাসিনা সড়কের আধা কিলোমিটার, বরইতলী- মগনামা সড়কের সাত কিলোমিটার, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের আড়াই কিলোমিটার, তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, তিনটি কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ ও বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি পরিমাণ নির্ধারণে কাজ চলছে। তবে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যান চলাচল করছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলার ৯ উপজেলার কমপক্ষে ৬০টি ইউনিয়নের ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢলের পানির তীব্র স্রোতের কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। গেল সোমবার কক্সবাজারের চকরিয়া ও উখিয়ায় পাহাড়ধসে পাঁচজনের এবং মাতামুহুরি নদী থেকে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রামুতে বাড়ির উঠানে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশু এবং পেকুয়ায় সাপের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৪:৩০ ৪২ বার পঠিত