আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের ‘পনেরো আগস্টের নেপথ্য কুশীলব’ শীর্ষক গ্রন্থে খুনী ও নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রন্থটিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকান্ডের নায়ক এবং নেপথ্যের কুশীলবদের ঘৃণ্য ও ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডসমূহসহ অনেক তথ্যপ্রমাণ ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
মন্ত্রী আজ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিলালিপির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসানকে। গ্রন্থটির রচনাকে অত্যন্ত সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং কাজ হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বুলবুল একজন সাংবাদিক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় এবং পেশাগত দায়িত্ববোধ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি মমত্ব থেকে বইটি লিখেছেন বলে আমার বিশ^াস- এজন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন বলেন, বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে এই একটি মাত্র বই যার মাধ্যমে সেই নীলনকশা ও ষড়যন্ত্র, নৃশংসতা, জিয়াউর রহমানের ভূমিকা - জিয়াউর রহমান কর্তৃক খুনিদের পুরস্কার, পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রবর্তনসহ সব রকমের অপরাজনীতির আবির্ভাব এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ পরিক্রমা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীও সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন।
নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি মেজর (অব:) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। যারা চেয়েছিল পাকিস্তানি ভাবধারায় এই দেশ পরিচালিত হবে তারা মুক্তিযুদ্ধেও সময় থেকেই এই ষড়যন্ত্র শুরু করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ওপর তারা সুপরিকল্পিতভাবে আঘাত করেছে। এনিয়ে আরো বৃহত্তর পরিসরে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা কাজের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বিশেষ আলোচক ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বুলবুল তার বইতে নগ্ন সত্যকে তুলে ধরেছেন। শ্রমনিষ্ঠ, তথ্যনিষ্ঠ এই বইকে আমি আকর গ্রন্থ হিসেবে মনে করছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার হয়েছে, কিন্তু তা অসম্পূর্ণ। ষড়যন্ত্রেরও বিচার হতে হবে। তিনি এজন্য অবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ আলোচক লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইতিহাসের অনেক সত্যই আড়াল হয়ে গেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পূর্বাপর ঘটনাসহ তদন্ত হওয়া দরকার। সত্যানুসন্ধান জরুরি।
তিনি বলেন, এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্য উন্মোচনের কাজটি বুলবুল শুরু করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় আমরা সত্যের কাছাকাছি পৌছতে পারবো।
লেখক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ইতিহাসের সত্য উদঘাটন না হলে আমরা কুহেলিকায় হারাবো। আমার এই প্রয়াসে সত্য জানতে উৎসাহ সৃষ্টি করবে বলেই আমার প্রত্যাশা।
ডিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, এই বইয়ে সেই সময় দায়িত্বশীল যারা ছিল তাদের ভূমিকা স্পষ্ট হবে। সেই সময়ের ঘটনাগুলো নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে যে প্রশ্নগুলো আছে তার উত্তর পাওয়া যাবে।
ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, এখনো এমন গোষ্ঠী রয়েছে যারা বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করতে চায়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের নেপথ্য কুশীলবদের আশ্রয়েই এরা বেড়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিলালিপির প্রধান নির্বাহী ও প্রকাশক জাহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের কারণে সোনার বাংলার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেছে। তেমনি তার হত্যাকান্ডের সংঘটনকারীদের বিচার হলেও অনেক প্রশ্নের মীমাংসা এখনো বাকি রয়ে গেছে। সেই প্রশ্নের মীমাংসা না হলে, বা সেই সম্পর্কে বৃহত্তর পরিসরে সচেতনতা তৈরি না হলে আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তির অবসান হবে না। সত্য অবমুক্ত হবে না। আমরা ঘৃণার উর্ধ্বে উঠতে পারবো না। আমাদের সমতার, ঐক্যের স্বপ্ন, সমৃদ্ধির স্বপ্ন ততটাই বিগ্রহসঙ্কুল থেকে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৩:০৩ ৫২ বার পঠিত