রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরে স্বাক্ষরিত কৃষ্ণসাগরীয় শস্য চুক্তি থেকে আগেই সরে গেছে মস্কো। এরপর ওডেসাসহ ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। এমনকি নতুন করে চুক্তিতে ফিরতে বেশ কয়েকটি শর্তও দিয়ে রেখেছে রাশিয়া।
এই পরিস্থিতিতে সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি অর্থহীন হয়ে পড়েছিল বলে দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া ওই চুক্তির মানবিক উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সোমবার (২৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনীয় শস্যের নিরাপদ রপ্তানি নিশ্চিত করা কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়া নিজেকে প্রত্যাহার করেছে কারণ এই চুক্তিটি তার অর্থ হারিয়েছে। সোমবার ভোরে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তিনি একথা বলেন।
ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে পুতিন বলেন, শস্য চুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়টি তার অর্থ হারিয়েছিল। এই চুক্তির যে মানবিক উদ্দেশ্য ছিল, সেটি কার্যকর বা পূরণ হয়নি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়ে দেশটির কৃষ্ণসাগরের জাহাজ চলাচল পথ ও বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় মস্কো। এতে করে ইউক্রেনের উৎপাদিত শস্য বন্দরে আটকে যায়। মূলত কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার অবরোধের কারণে ইউক্রেনের বন্দরে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত থাকা কোটি কোটি টন খাদ্যশস্য আটকা পড়ে ছিল।
এতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম দ্রুত হারে বাড়তে থাকে যার ফলে দরিদ্র দেশগুলোয় খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানি স্বাভাবিক করতে গত বছরের ২২ জুলাই রাশিয়া–ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যা কার্যকর হয় আগস্ট মাসের শুরু থেকে।
চুক্তির মধ্যস্থতায় ছিল জাতিসংঘ ও তুরস্ক। ওই চুক্তির ফলে রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে তাদের অবরোধ শিথিল করে যাতে ইউক্রেন থেকে সমুদ্রপথের নিরাপদ করিডর দিয়ে খাদ্যবাহী জাহাজ চলাচল করতে পারে। এতে করে আগস্ট থেকেই ইউক্রেনের তিনটি বন্দর থেকে বাকি বিশ্বে নিরাপদে খাদ্যশস্য রপ্তানির পথ খুলে যায়।
মূলত যুদ্ধ সত্ত্বেও বৈশ্বিক খাদ্য সংকট দূর করতে ইউক্রেনকে তার কৃষ্ণসাগর বন্দরগুলো থেকে শস্য রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল রাশিয়া। তবে এই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য রাশিয়ার শর্ত উপেক্ষা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে মস্কো গত সপ্তাহে সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়।
এরপর এই চুক্তিতে রাশিয়ার ফিরে আসার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন গত সপ্তাহে বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেন। তবে সেসব দাবির মধ্যে সরাসরি মানবিক উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করেননি তিনি।
অন্যদিকে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রাশিয়া প্রায় প্রতিদিন ইউক্রেনের খাদ্য-রপ্তানিকারক বন্দরগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা করছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় ওডেসা বন্দরে রোববার রাশিয়ার চালানো হামলায় একজন নিহত এবং আরও অনেক আহত হয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে দ্বিতীয় রাশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সোমবার প্রকাশিত ওই নিবন্ধে পুতিন বলেছেন, রাশিয়া এ বছর রেকর্ড শস্য ফলন আশা করছে।
পুতিনের ভাষায়, ‘আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের দেশ বাণিজ্যিকভাবে এবং বিনামূল্যে ইউক্রেনীয় শস্য প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম। বিশেষ করে যেহেতু আমরা আবার এই বছর রেকর্ড ফসলের আশা করছি।’
আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য ক্রমশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলো। যদিও আফ্রিকার দেশগুলোতে রাশিয়া এখন পর্যন্ত খুব কমই বিনিয়োগ করেছে বলে জাতিসংঘের তথ্যে দেখা যাচ্ছে। তারপরও আফ্রিকা মহাদেশের সমর্থন আদায়ের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করার জন্য ২০২২ সালের মার্চে জাতিসংঘে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটের সময় ২৮টি আফ্রিকান দেশ নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু আরও ২৫টি দেশ ওই ভোটাভুটিতে হয় বিরত থাকার পক্ষে ভোট দেয় বা মোটেও ভোট দেয়নি।
পুতিন লিখেছেন, ‘আফ্রিকায় শস্য, খাদ্য, সার এবং আরও অনেক কিছুর সরবরাহ করার জন্য রাশিয়া জোরালোভাবে কাজ চালিয়ে যাবে: আমরা আফ্রিকার সাথে সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের অত্যন্ত মূল্যায়ন করি এবং এই সম্পর্কের গতিশীলতার বিকাশ অব্যাহত রাখা হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৯:২৬ ৪৫ বার পঠিত