শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ৬ রান। আফগান পেসার করিম জানাতের প্রথম বলে চার মেরে লক্ষ্য আরও সহজ করে দেন মিরাজ। তবে পরের তিন বলে উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিক অর্জন করেন জানাত। কিন্তু পঞ্চম বলে আবারও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর জয় উপহার দেন শরিফুল ইসলাম।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আফগানিস্তানের দেওয়া ১৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় ৩০ রানের মধ্যেই রনি তালুকদার ও নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারায় টাইগাররা।
দলীয় ৫ রানে আফগান পেসার ফজল হক ফারুকির বলে বোল্ড আউট হন রনি। বিদায়ের আগে ৫ বলে ১ বাউন্ডারিতে মাত্র ৪ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। এরপর তিনে নেমে নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি শান্তও। মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে বিদায়ের আগে ব্যক্তিগত ১৪ রান করেন তিনি।
এরপর ক্রিজে এসে লিটন দাসের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। তবে দলীয় ৩৯ রানের মাথায় আজমতউল্লাহর বলে রশিদ খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন লিটন। ১৯ বলে ধীরগতির ইনিংসে ১৮ রান করেন দেশসেরা এই ব্যাটার। এরপর তাওহিদ হৃদয় ক্রিজে আসার পর ৭.২ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪২ রানে থাকার সময় হানা দেয় বেরসিক বৃষ্টি।
তবে কিছুক্ষণ বৃষ্টি হওয়ার পর তা থেমে যায়। পরে আবারও ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব-তাওহিদ জুটি দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু দলীয় ৬৪ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব। ফরিদ আহমেদের বলে বাউন্ডারি লাইনের কাছে করিম জানাতের হাতে ক্যাচ দেন টাইগার ক্যাপ্টেন। বিদায়ের আগে ১৭ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৯ রান করেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
এর আগে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশের কাপ্তান সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা ইনিংসের শুরুতেই প্রমাণ করেন টাইগার বোলাররা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪০ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিল স্বাগতিকরা।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান আফগান ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাই। তবে পরের বলেই বাঁহাতি এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৮ রানে ফেরেন হার্ডহিটার এই ব্যাটার।
জাজাইকে ফেরানোর পরের ওভারেই আরেক আফগান ওপেনার গুরবাজকে ফেরান তাসকিন। চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে তাসকিনের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজের তালুবন্দি হন তিনি। ১১ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন ডানহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
তিনে ব্যাট করতে নামা ইবরাহিম জাদরান বিদায় নেন জাজাইয়ের মতো। পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে হাঁকান ছক্কা তিনি। তবে শরিফুল ইসলামের পরের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে ৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এই নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইবরাহিমকে পাঁচবার আউট করলেন যুব দলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা এই পেসার।
এরপর চারে ব্যাট করতে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি করিম জানাত। দলীয় ৫২ রানের মাথায় সাকিব আল হাসানের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাজমুল হাসান শান্তর তালুবন্দি হন তিনি। ৯ বলে ৩ রান করে বিদায় নেন এই পেস অলরাউন্ডার। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান মোহাম্মদ নবী।
পঞ্চম উইকেটে নাজিবউল্লাহ জাদরানকে নিয়ে ৩৫ রানের জুটি গড়ে দলের সংগ্রহ সেঞ্চুরির কাছাকাছি নিয়ে যান আফগান সাবেক অধিনায়ক নবী। কিন্তু চতুর্দশ ওভারে অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে উইকেটের পেছনে তুলে দেন নাজিবউল্লাহ। দারুণ ক্যাচে ২৩ রানে আফগান ব্যাটারকে বিদায় করেন লিটন।
এরপর আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে নিয়ে ৫৬ রানের জুটি গড়েন নবী। শেষ তিন ওভারের ঝোড়ো ব্যাটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৫৪ রানের লড়াকু পুঁজি পায় আফগানিস্তান। দলের পক্ষে ৪০ বলে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন নবী। এছাড়া ১৮ বলে ৪ ছক্কায় ৩৩ রানের ক্যামিও এক ইনিংস খেলেন আজমতউল্লাহ।
বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট শিকার করেন সাকিব। এছাড়া ১ টি করে উইকেট পান নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি মিরাজ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৫:৩৮ ৯৮ বার পঠিত