বুধবার, ২৮ জুন ২০২৩

বর্ষায় ভিন্ন রূপে কক্সবাজার, হোটেল রুমে বড় ছাড়

প্রথম পাতা » চট্রগ্রাম » বর্ষায় ভিন্ন রূপে কক্সবাজার, হোটেল রুমে বড় ছাড়
বুধবার, ২৮ জুন ২০২৩



বর্ষায় ভিন্ন রূপে কক্সবাজার, হোটেল রুমে বড় ছাড়

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজার। এবার ঈদুল আজহায় পর্যটক বরণে সম্পূর্ণ প্রস্তুত এ পর্যটন নগরী। ঈদের টানা ছুটি ও বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজেও চলছে বিশেষ ছাড়।

তারকামানের হোটেলগুলোতে চলছে ৪০ শতাংশ এবং অন্যান্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে থাকছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড়। তাই এবারের ঈদের টানা ছুটিতে কম খরচে কক্সবাজার ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য সুখকরই হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ঈদুল আজহার টানা এ ছুটিতে কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের সমুদ্রস্নান ও পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমণ নিরাপদ করতে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে লাইফ গার্ড সংস্থা, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।

হোটেল রুমে বিরাট ছাড়
পর্যটন সংশ্লিস্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড় দিলেও রুম বুকিং হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। তারপরও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ঈদুল আজহার পরদিন থেকে পর্যটকদের ঢল নামবে সৈকতে।

এরই মধ্যে সাগরপাড়ের তারকামানের হোটেলগুলোতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নতুন করে সাজানো হয়েছে হোটেলগুলো।

সী গাল হোটেলের ম্যানেজার তারেক আজিজ বলেন, এবারের ঈদুল আজহা পড়েছে বর্ষা মৌসুমে। এরই মধ্যে হোটেলের ৯০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে, বাকিগুলো বুকিং হয়ে যাবে আশা করি। আর বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার এসে পর্যটকরা দেখতে পাবেন ভিন্ন এক প্রকৃতির রূপ।

হোটেল কক্স-টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এবার ৪০ শতাংশ ছাড়ে রুম পাওয়া যাচ্ছে। তবে অন্যান্য বছর ঈদুল আজহার ছুটিতে যেভাবে বুকিং হয়, এবার তা হয়নি। এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। আশা করি, দুদিনের মধ্যে আশানুরূপ রুম বুকিং হবে। আর ঈদুল আজহার ছুটিতে ভালো ব্যবসা হবে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ঈদুল আজহার ছুটিতে তাদের আওতাধীন শতাধিক হোটেলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় সব হোটেলে ৫০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তবে ঈদের পর দিন থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নামবে এবং হোটেলের রুম অনেকাংশে পর্যটকে ভরে যাবে।

বর্ষায় সাগরের ভিন্ন রূপ
সরেজমিনে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে দেখা যায়, বর্ষা ঋতুতে ভিন্ন রূপ পেয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। অন্য সময়ের চেয়ে এখন সমুদ্র উত্তাল, ঢেউগুলোও বেশ বড় বড়।

হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের আসল রূপ দেখতে হলে এখনই উপযুক্ত সময়। তাই পর্যটকরা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের আসল রূপ দেখতে অবশ্যই ঈদের টানা ছুটিকেই বেছে নেবেন বলে বিশ্বাস।

কক্সবাজার শহরে সমুদ্র সৈকতের তিনটি জনপ্রিয় পয়েন্ট হল লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী। তবে লাবণী ও সুগন্ধা সৈকতে পর্যটকের আনাগোনা অপেক্ষাকৃত বেশি। কলাতলী পয়েন্টে সবসময়ই পর্যটক কম থাকে। তিনটি সৈকতে বেড়ানোর পাশাপাশি ছাতার নিচে আরামচেয়ারে বসে সমুদ্র উপভোগও করতে পারেন।

থাকতে হবে সতর্ক
এদিকে, বর্ষা মৌসুমে সাগর উত্তাল থাকে; তাই সমুদ্রস্নানে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত লাইফ গার্ড কর্মীরা। তাদের দাবি, সমুদ্রস্নানের নির্দেশনা ও লাইফ গার্ড কর্মীদের পরামর্শ মেনে চললে দুর্ঘটনার তেমন কোন আশঙ্কা নেই।

সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে লাখো পর্যটক ভিড় জমাবেন সৈকতে। তাই সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সাগর যেহেতু উত্তাল থাকবে, তাই সৈকতে টহল, টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ ও বোট নিয়ে সাগরে সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করবে লাইফ গার্ড কর্মীরা।

পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে এসে সৈকতে সমুদ্রস্নানে নামার আগে অবশ্যই লাল-হলুদ পতাকা চিহ্নিত স্থানে এবং লাইফ গার্ড রয়েছে এসব এলাকায় নির্দেশনা মেনে সমুদ্রস্নান করবেন।

কয়েক স্তরের নিরাপত্তা
ট্যুরিস্ট পুলিশ বলছে, আগত পর্যটকদের জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম বলেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসেন। তাই আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

তিনি জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা কয়েক স্তরের বলয় তৈরি করা হয়েছে। সাগরপাড়, মার্কেট, হোটেল-মোটেল জোন ও পর্যটনস্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

যেখানে খুশি ছুটতে পারেন
বর্ষায় কক্সবাজারে এসে ভ্রমণে যেতে পারেন হিমছড়ি, ইনানী ও পাতুয়ারটেক। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষা হিমছড়ি সমুদ্র সৈকত। এখানকার পাহাড়ে উঠে চোখের সামনে দেখুন সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র। এছাড়া বর্ষায় হিমছড়ির পাহাড়ের হিম শীতল ঝরনাগুলোও প্রাণ ফিরে পায়। এ পাহাড়ের ওপরে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। এখানকার সৈকত স্নানের জন্য উপযোগী নয়।

হিমছড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে আরেকটি আকর্ষণীয় সৈকত ইনানী। এখানে রয়েছে পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার বেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর। সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে ইনানীর কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এ সৈকতে বেড়িয়ে সময় থাকলে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে আরও কিছুটা সামনে ঘুরে আসতে পারেন।

ইনানী সৈকতের পর কয়েক কিলোমিটার দূরে পাতুয়ারটেক সৈকত। এখন পর্যটকদের জন্য নতুন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। এ সৈকত ভাটার সময় পাথরে ছেয়ে যায়। আবার জোয়ারের সময় পাথরগুলো ঢেকে যায়। এই অপরূপ দৃশ্য মুগ্ধ করে ভ্রমণ পিপাসুদের।

কক্সবাজার শহরের পাশে আছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বেশকিছু কেয়াং ও প্যাগোডা। রামুর বৌদ্ধ মন্দির ঘুরে যেতে পারেন ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে রয়েছে এ সাফারি পার্ক। কক্সবাজার জেলার ডুলাহাজরা বনাঞ্চলের ডুলাহাজরা ও হারগোজা ব্লকের প্রায় ৯০০ হেক্টর জায়গার এ পার্কে দেখা মিলবে নানান রকম প্রাণী।

প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক। এখানে নির্দিষ্ট প্রবেশের জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৯:৪৯   ৫৫ বার পঠিত