ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং সুপার প্রজেক্ট কনসোরটিয়াম যৌথভাবে আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক জাতীয় সিম্পোজিয়াম আজ রাজধানীর একটি হোটেলে বলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সিম্পোজিয়ামে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন। এছাড়াও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ডিসিসিআই,এ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন যৌথভাবে সুপার প্রজক্টে কনসোরটিয়াম’ বাস্তবায়ন করছে, যার সহায়তায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিভিল গ্রটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড।
অনুষ্ঠানে ‘প্রাইভেট সেক্টর ইমারজেন্সি অপরাশেন সেন্টার (পিইওসি)’র ওয়েবসাইট’-এর উদ্বোধন করা হয়, যেখানে দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের তথ্যাদি এবং অগ্নি নির্বাপনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও প্রাপ্তির বিভিন্ন তথ্য সমন্বিত করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে প্রায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, যারা যেকোন অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে এবং সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ হতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ প্রদান ও ড্রিলের ওপর অধিক হারে মনোনিবেশ করা হচ্ছে। তিনি জানান, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘প্রাইভেট সেক্টর ইমারজেন্সি অপরাশেন সেন্টারের (পিইওসি) ওয়েবসাইটি দুর্যোগ বিষয়ক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে তা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, জনজীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত ও বসত বাড়ি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফায়ার ড্রিল বাস্তবায়ন এবং বিশেষ করে ঢাকা শহরে অনাকাঙ্খিত দূর্যোগ প্রতিরোধ বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগের ম্যাপিং খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ফ্যাক্টরিসমূহে কমপ্লায়েন্সের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, ফলে আন্তর্জাতিক মানের কারখানা বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে এবং অন্যান্য শিল্পখাতেও এ ধরনের উদাহরণ অনুসরণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও বেসরকারিখাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণকে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বল্পসুদে ঋণ দানসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া নিরাপদ ভবন নির্মাণ নিশ্চিতকল্পে বিল্ডিং কোড অনুসরণের আহবান জানান। তিনি বলেন, জীবনের সাথে ঝুঁকি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, তাই যেকোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার ও বেসরকারিখাতের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ক্রমশই ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হচেছ এবং সম্ভাবনাময় অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ, তাই শুধুমাত্র ঢাকাতেই নয় বরং সমগ্র বাংলাদেশের ঝুঁকি মোকাবেলায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি।
সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, শিল্পখাত আমাদের অর্থনীতির প্রাণ, তাই অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে শিল্পের পাশাপাশি জনজীবনে যেকোন দূর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও এর বস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। ডিসিসিআই সভাপতি জানান, আমাদের জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান প্রায় ৩৬ শতাংশ এমতাবস্থায় সামগ্রিক অর্থনীতিকে সকল ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
তনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবেলায় নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের কোন বিকল্প নেই এবং এ ধরনের প্রযুক্তি ও অবকাঠমো নির্মাণে বেসরকারিখাতেকে উৎসাহিতকরণে আর্থিক ও নীতিসহায়তা একান্ত অপরিহার্য।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৪:১৯ ৮৫ বার পঠিত