ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে দিয়ে নতুন করে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামাস নিশ্চিহ্ন করার নামে ভূখন্ডটির নিরীহ বাসিন্দাদের ওপর প্রতিদিনই চলছে বর্বর হামলা। মার্কিন মদদে ক্রমেই বাড়ছে ইসরায়েলি এ আগ্রাসনের তীব্রতা; তার সঙ্গে বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও। সবশেষ এ মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে আছে নারী এবং শিশুও।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পাশাপাশি সিরিয়ায়ও বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ছয়জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইয়েমেনেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার (২৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের কেন্দ্রে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এক নারী ও এক পুরুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও একজন।
অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের এক আবাসিক ভবনে আরেকটি বিমান হামলায় এক শিশু নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
এছাড়া, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইসরায়েলি বাহিনী মঙ্গলবার গাজা উপত্যকা জুড়ে কমপক্ষে ৩৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় পুনরায় আগ্রাসন শুরুর পর এক সপ্তাহে ২৭০ জনের বেশি শিশু নিহত হয়েছে।
এদিকে একইদিন সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় কোয়াতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, মঙ্গলবার সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর পর তাদের পক্ষ থেকে এই পাল্টা হামলা চালানো হয়। তবে, ইসরায়েলি বাহিনী তখন সিরিয়ার ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থান করছিল কি না তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। মূলত, গাজার ওপর আগ্রাসন বন্ধ না করা পর্যন্ত লোহিত সাগরে ইসরায়েলি নৌচলাচল বন্ধ ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। এরপর থেকেই ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় সাদা প্রদেশে হুতিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বাহিনী।
হুথি-সংশ্লিষ্ট আল মাসিরাহ টিভি জানিয়েছে, মার্কিন বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় সাদা প্রদেশের সাহার জেলায় দুটি অভিযান চালিয়েছে। চ্যানেলটি একই জেলায় তিনটি হামলার খবর প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টা পরে সর্বশেষ অভিযানগুলো শুরু হয়।
গত ১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনে প্রতিদিন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৩ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের অতর্কিত এক হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওইদিন থেকেই ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। হামাস নিধনের নামে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে থাকে অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিকে। ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর আগ্রাসনে বিশ্বের বুকে এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় এ উপত্যকা।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার থেকে ফের অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ১৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৪ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। হাজারও ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন এবং তাদের জীবিত উদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩২:১৩ ১২ বার পঠিত