বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

রোজাদারদের ইফতার করানোর ফজিলত

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » রোজাদারদের ইফতার করানোর ফজিলত
বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫



রোজাদারদের ইফতার করানোর ফজিলত

রমজান মাস। দোয়া কবুলের মাস। নেকির ভান্ডার পূর্ণ করার মাস। এজন্য যেসব কাজ বা আমল করলে বেশি সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায় সেসব কাজে বা আমলে মনোনিবেশ করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। যেমন; রোজা রাখা, কোরআন তেলাওয়াত করা, ইতেকাফ করা, সাহরি খাওয়া, সাদকা করা, ইফতার করা ও করানো, কল্যাণমূলক কাজ করা, ইত্যাদি।

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের শেষদিন রমজান মাস সম্পর্কে সাহাবিদের কিছু নসিহত করেন। সেখানে তিনি এটাও বলেন,

এ মাস সহমর্মিতার মাস। (শুআবুল ঈমান: ৩৩৩৬)।

এর মাধ্যমে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে সহমর্মিতার প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছেন। অন্যের কষ্টে ব্যথিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন মুমিনদের। তিনি যেন বলছেন, তোমরা যখন সাহরি বা ইফতার করবে, তখন খোঁজ নিও তোমার প্রতিবেশীর।

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তা তার পাপমোচন ও দোযখ থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর এতে সে ওই রোজাদারের ঘুম অথচ রোজাদের পুণ্য একটুও কমবে না।

তখন সাহাবিগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের সবার তো রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। তখন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ দ্বারা বা একটি খেজুর দ্বারা বা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবে তাকেও আল্লাহতায়ালা রোজাদারের সমান সওয়াব দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে উদর পূর্ণ করে খাওয়াবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউস থেকে এমন পানি পান করাবেন যে, সে জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। (সহিহ্ ইবনে খুজাইমা-১৮৮৭)

ইফতার করিয়ে সওয়াব পাওয়ার জন্য খুব আহামরি কিছু খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। একেবারে নিতান্তই কিছু খাওয়ালেও আল্লাহ তার জন্য ‘আজরের’ ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কত মহান আমাদের প্রভু। তিনি সামান্য কাজে, সামান্য খরচের বিনিময়ে কী অসামান্য সওয়াব রেখেছেন!

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে-

যে ব্যক্তি রমজান মাসে তার উপার্জিত হালাল রিজিক থেকে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, ফেরেশতাগণ রমজান মাসের প্রত্যেক রাতে তার জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন। আর কদরের রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) তার সাথে মোসাফাহা করবেন। আর যার সাথে হজরত জিবরাইল (আ.) মোসাফাহা করবেন তার অন্তর কাঠিন্যমুক্ত হবে এবং আল্লাহর ভয়ে কান্নার সময় তার অশ্রু বৃদ্ধি পাবে। (সহিহ্ ইবনে হিব্বান)।

বাহ কত চমৎকার পুরস্কার আল্লাহর পক্ষ থেকে! আপনি সারাদিন রোজা রেখে নিশ্চিত হতে পারেন না আপনার রোজা কবুল হয়েছে কিনা বা পূর্ণ নেকি পেয়েছেন কিনা। কিন্তু আপনি একজন রোজাদারকে ইফতার করানোর মাধ্যমে সে-ব্যক্তির রোজা রাখার পুরো ফজিলত পেয়ে যাচ্ছেন।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত কামিয়ে নিচ্ছেন। কেয়ামতের দিনে সবচে’ ভয়াবহ মুহূর্তে আপনি হাউজে কাউসারের পানি পেয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যদি সামর্থ্য দিয়ে থাকে তাহলে এটাও একটা সুযোগ এই মাসে নেকির ভান্ডার পূর্ণ করার। হোক না সামর্থ্য যৎসামান্যই। যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই শুরু করে দিন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এর মধ্যে বরকত দেবেন।

সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ভালো ইফতার ও সাহরি খাওয়ারও সুযোগ হয় না। তাদের জীবন অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা আপনার প্রতিবেশী, প্রতিবেশী হিসেবেও তো তাদের প্রতি আপনার একটা হক আছে তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার। আপনি ইফতার ও সাহরিতে পেট ভরে খেয়ে বাকি খাবারের অপচয় করছেন। আর আপনার পাশের, আপনার এলাকারই আরেকটি পরিবার না খেয়ে রোজা রাখছেন।

অনেকে শুধু পান্থা ভাত, পানি আর লবন দিয়ে খেয়ে রোজা রাখছেন। আর ইফতার করছেন শুধু পানি দিয়ে। একজন মুসলমান হিসেবে আপনার কি কোনো দায়িত্ববোধ নেই? আল্লাহ আপনাকে যে নেয়ামত দিয়েছেন সেই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় কি আপনি করবেন না? আপনি যদি সেই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করেন তাহলে একটা সময় আল্লাহ তায়ালা আপনার কাছ থেকে সেই নেয়ামত ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন।

আমাদের দেশের প্রতিটি বিত্তবান বা সামর্থ্যবান ব্যক্তি যদি তাদের প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেন তাহলে এদেশের মানুষ না খেয়ে রোজা রাখবে না। শুধু পানি দিয়ে ইফতার করতে হবে না ।

তাই আসুন, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অন্য রোজাদারকে ইফতার করাই। সাহরি খাওয়াই। আমাদের হাতকে প্রসস্ত করি। সহানুভূতিশীল হই । আমাদের নেকির ভান্ডার পূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মুসলিম উম্মাকে বিশেষ করে গরিব-দুঃখীকে ইফতার করানোর তাওফিক দান করুন। তাদের ইফতার করার জন্য অর্থ দান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১২:০৯:২৮   ৩ বার পঠিত