রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক রজব থেকেই

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক রজব থেকেই
রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫



রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক রজব থেকেই

‘পশ্চিম দিগন্তে উঁকি দিয়েছে রজবের বাঁকা চাঁদ। রমাদানের আগমনি বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে রজব। আরবি বছরের সপ্তম মাস এটি। রজব অর্থ সম্মানিত। আরবি চারটি মাস হারাম। তথা এ সময়গুলোতে যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ। চারটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ্ব , মহররম ও রজব।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারোটি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে। সুতরাং তোমরা এই মাসসমূহে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৪)

রজব মাস সম্বন্ধে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

বছর হচ্ছে বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম (নিষিদ্ধ)। চারটির মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক : জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও (মুদার গোত্রের) রজব মাস; যে মাসটি জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী। (বুখারি, হাদিস : ৪৬৬২; মুসলিম, হাদিস : ১৬৭৯)

নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি পরিমাণে পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’। অর্থ, বরকত দিয়ে দাও হে আল্লাহ! রজব ও শাবানে, ‎‎পৌঁছিয়ে দাও আমাদের মাহে রামাদানে। (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৫৯; সুনানে বায়হাকি, শুআবুল ইমান, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৭৫)

রসুলের সুন্নাহর অনুসরণে যুগে যুগে রজব মাসের নতুন চাঁদ দেখে মুমিনেরা গেয়ে উঠে ,

  ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান
ওয়া বাল্লিগনা রামাদান’

দুটো লাইনের যেন একটি কবিতা। যতবারই নড়ে উঠে ঠোটদুটো ততবারই মনে হয় রমাদান যেন কড়া নাড়ছে হৃদয়ের কপােট। এ যেন এক আহবান। মাহে রমাদানের জন্য নিজেকে প্রস্তুতের। পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত জীবনের। অবিলতাহীন এক সুন্দরের।

উলামায়ে কেরাম বলেছেন, আশহুরে হুরুমের এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে, এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তাওফীক হয়। আর আশহুরে হুরুমে কষ্ট করে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্যান্য মাসেও গুনাহ পরিহার করা সহজ হয়।-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১১১; মাআরিফুল কুরআন ৪/৩৭২

পবিত্র হাদিস শরিফে রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ এসেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না, অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন। রাতগুলো হলো—জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৭)

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন শাবান মাসে, তারপর রজব মাসে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)–এর আমল দেখে তা বুঝতে পারতাম।

জাহেলীযুগের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন মাজারে পীর-বুজুর্গের নামে ু‘ওরস’ করে পশু জবাই করে । রজব মাস আসলেই ওরসের ধুম পড়ে যায় বিভিন্ন মাজারে। জাহেলী যুগের ‘ফারা’, ‘আতীরা’ আর বর্তমানের এসব জবাইকৃত পশুর মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারো নামে মান্নত করা, তা যদি পীর-বুযুর্গের নামেও হয় তবুও তা শিরক।

জাহেলী যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় দেবতা/প্রতীমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু যবাই করার একটি রেওয়াজ ছিল। একে ‘আতীরা’ বলা হত। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শিরকী রেওয়াজের মূলোৎপাটন করেছেন। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘ইসলামে ‘ফারা’ (উট বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতীমার উদ্দেশ্যে) জবাই করার কোনো প্রথা নেই এবং ‘আতীরা’ও নেই। অর্থাৎ রজব মাসে প্রতীমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার প্রথাও নেই।’ (সহিহ বুখারি ২/৮২২)

রজব মাসের জন্য বিশেষ কোন আমল বর্ণীত নেয় তবে এটা যেহেতু রমাদানের প্রস্তুতিমূলক দুটি মাসের অন্যতম একটি তাই আমরা রমাদানের জন্য প্রস্তুতিমূলক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি: ১. শিরক-বিদআতমুক্ত জীবন গড়ার প্রতিজ্ঞা। ২. বেশী বেশী রোজা রেখে রমাদানের প্রস্তুতি নেয়া বিশেষ করে সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজা ও ১৩.১৪,১৫ তারিখের রোজা যা আইয়্যামে বীজ নামে পরিচিত।

৩. পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত জীবন গড়ার অঙ্গীকার। ৪. রাতের তাহাজ্জুদের মাধ্যমে কিয়ামুল লাইলের প্রস্তুতিগ্রহণ। ৫. অধিকপরিমাণে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে রমাদানের জন্য প্রস্তুত হওয়া। এছাড়া নফল সদাকা, সদাচারণ , বান্দার হক আদায়সহ নিজেকে রমাদানের জন্য যথাসম্ভব প্রস্তুত করতে পারি। এখন থেকেই নিজের মধ্যে থাকা কলুষ-কদাকার অভ্যাসগুলিকে পরিত্যাগ করা শুরু করতে পারি। মহান রবের ‎প্রতি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নিজেকে রমাদানের জন্য পূর্ণ প্রস্তুত করাই হোক আমাদের রজবের অঙ্গিকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৪:১৩   ২ বার পঠিত