আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন। এদিন এই পৃথিবীতে আগমন করেন খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিসাস ক্রাইস্ট বা যিশু খ্রিষ্ট বা ঈসা মসীহ। আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ২৩ বছর আগে এদিনে জেরুজালেমের বেথেলহাম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্ম হয় তাঁর।
তবে যিশুর জন্মের অনেক বছর পর খ্রিষ্টানরা এ দিনটিকে আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করেন। ৪৪০ সালে পোপ এ দিবসকে স্বীকৃতি দেন। তবে উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায় মধ্যযুগে। সে সময় এর নাম হয় ‘ক্রিসমাস ডে’।
এদিনে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও নানা আয়োজনে আজ উদযাপন করছে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব, যিশু খ্রিষ্টের জন্মতিথি, বড়দিন।
আজ খ্রিষ্টানদের ঘরে ঘরে উৎসবের আনন্দ। বর্ণিল আলোকের ফল্গুধারায় ভেসে যাচ্ছে গির্জা, গৃহ-দুয়ার আর অভিজাত হোটেলগুলো। সাজানো হয়েছে গোশালা, ক্রিসমাস ট্রি আর বহুবর্ণ বাতি দিয়ে।
আজ সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন, বেসরকারি টিভি ও রেডিও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে সম্প্রদায়ের নেতাদের জন্য আজ দুপুরে বঙ্গভবনে এক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। দুপুর ১২টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপ্রধান এই উপলক্ষে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে একটি শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি একটি কেক কাটবেন এবং পরে ধর্মীয় নেতাদের সাথে ফটোসেশনে অংশ নেবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীসহ সবার শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, ‘একটি বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো মজবুত করতে হবে। আমি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একটি আধুনিক, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় সামিল হওয়ার আহ্বান জানাই।’
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ’ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে সবাইকে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করছে। এখানে রয়েছে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা। বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ ও সম্প্রীতিকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে আমি আশা করি।’
বড়দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
খ্রিষ্টানদের এই উৎসব ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. মাসুদ করিম।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রমনার কাকরাইলে অবস্থিত সেন্ট মেরী’স ক্যাথেড্রাল চার্চে বড়দিনের সার্বিক নিরাপত্তা মহড়া পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘নগরীর প্রতিটি চার্চে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও এই উৎসবকে ঘিরে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল টিমসহ স্পেশালাইজড ইউনিটগুলো দায়িত্ব পালন করবে। বর্তমানে সেনাবাহিনী আমাদের সাথে আছে। তারাও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। সকলের সহযোগিতায় অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে বড়দিন উদযাপন হবে।’
বড়দিন উপলক্ষে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ নেই দাবি করে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সতর্ক রয়েছি।’
বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ।
যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন স্মরণে গির্জাগুলো সেজেছে বর্ণিলভাবে। বড় হোটেলগুলোও সাজানো হয়েছে বড়দিনের আমেজে। আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। সেখানে শিশুদের জন্য নানা উপহারের ডালি সাজিয়ে আসবেন ‘সান্তা ক্লজ’।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় বড় দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
রমনার কাকরাইলের সেন্ট মেরীস ক্যাথেড্রাল চার্চের গির্জাসহ সব গির্জায় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হোটেল সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন, রেডিসনসহ নামিদামি তারকা হোটেলগুলোতে বড়দিন উদযাপনের নানা আনন্দমুখর আয়োজন করা হয়েছে।
কাকরাইলের রমনা সেন্ট মেরীস ক্যাথেড্রাল চার্চ ও মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা গির্জার ভেতরে ও বাইরে নানা রঙের বেলুন, নকশা করা ককশিট, রঙিন কাগজ, জরি ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি।
গির্জা প্রাঙ্গণে থাকা গাছে ঝোলানো হয়েছে রং-বেরঙের বাতি। গির্জার মূল ফটকের বাইরে মেলা বসেছে। মেলার দোকানগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তা ক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হচ্ছে।
দ্য ওয়েস্টিন হোটেলে বড়দিনে আজ থাকছে শিশুদের জন্য বিশেষ আয়োজন। সকাল ৯ টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দ্য ওয়েস্টিন ঢাকার গ্র্যান্ড বলরুমে থাকবে বিনোদনের হরেক রকম ব্যবস্থা। টিকিটের মূল্য পড়বে জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা।
শেরাটন হোটেলে কিডস পার্টি আজ। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হোটেলটির আলফ্রেস্কো লেভেল ১৪-এ আয়োজিত হবে এই অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২১:০৮ ৪ বার পঠিত