বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

আল্লাহর নবী হজরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে কোরআনে যা উল্লেখ আছে

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » আল্লাহর নবী হজরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে কোরআনে যা উল্লেখ আছে
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪



আল্লাহর নবী হজরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে কোরআনে যা উল্লেখ আছে

ইসলামের প্রতিটি নবীর জীবনই আমাদের জন্য অনুসরণীয় ও শিক্ষণীয়। তাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আল্লাহর দয়া, কুদরত ও হিকমতের অনন্য দৃষ্টান্ত। আল্লাহর নবী হজরত ঈসা (আ.)-এর জীবনও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি ছিলেন এক মহান নবী, যার জীবন অলৌকিক ঘটনা ও আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে পরিপূর্ণ।

হজরত ঈসা (আ.)-এর জীবন ও কর্ম নিয়ে পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াত উল্লেখ রয়েছে। যা তার নবুওয়াতের বিশেষত্ব, তার অলৌকিক ক্ষমতা, আল্লাহর প্রতি তার নিবেদনের প্রমাণ বহন করে। তিনি বনি ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত নবী, যার ওপর আল্লাহর কিতাব ইনজিল নাজিল হয়েছিল। তার জীবন মানবজাতির জন্য শিক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এ প্রবন্ধে আমরা পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত হজরত ঈসা (আ.) সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তুলে ধরব, যা আমাদের ঈমান মজবুত করার পাশাপাশি নবীদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও হিকমত সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি দেবে।

পিতাহীন নবী হওয়া

কোরআন বলছে, হজরত ঈসা (আ.) ছিলেন একমাত্র নবী, যিনি পিতাহীনভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন। এটি আল্লাহর কুদরতের বিশেষ নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

তিনি বললেন, এমনটাই হবে। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করলে কেবল বলেন ‘হও’, তখনই তা হয়ে যায়। (সুরা আলে ইমরান ৪৭)

আল্লাহর দেয়া নাম ঈসা মাসিহ

আল্লাহ নিজেই হজরত ঈসা (আ.)-এর নাম রেখেছেন ঈসা মাসিহ। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন ফেরেশতারা বলল, হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে তার পক্ষ থেকে এক বাণী দিয়ে সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম হবে মাসিহ, ঈসা ইবনে মারইয়াম। (সুরা আলে ইমরান ৪৫)

শয়তানের অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকা

হজরত ঈসা (আ.) এবং তার মাতা হজরত মারইয়াম (আ.) শয়তানের অনিষ্ট থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, আমি তাকে ও তার সন্তানকে অভিশপ্ত শয়তানের স্পর্শ থেকে রক্ষা করেছি। (সুরা আলে ইমরান ৩৬)

দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানের অধিকারী

ঈসা (আ.) দুনিয়া ও আখিরাতে মহাসম্মানের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ বলেন, তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত হবেন এবং তিনি আমার ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। (সুরা আলে ইমরান ৪৫)

মায়ের কোলে বক্তব্য দেয়া

হজরত ঈসা (আ.) মাতৃক্রোড়ে থেকেই অলৌকিকভাবে কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী করেছেন। (সুরা মারইয়াম ৩০)

বনি ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত হওয়া

কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঈসা (আ.) বনি ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, আর তিনি ইসরাঈল বংশের প্রতি রাসুল ছিলেন। (সুরা আলে ইমরান ৪৯)

অলৌকিক ক্ষমতা লাভ

ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে ক. আমি মাটির পাখি তৈরি করি, এরপর এতে ফুঁ দিলে তা জীবন্ত পাখি হয়ে যায়। খ. আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করি। গ. আমি মৃতকে জীবিত করি। (সুরা আলে ইমরান ৪৯)

ইনজিল লাভ ও তাওরাতের সত্যায়ন

হজরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ ইনজিল কিতাব দান করেছেন, তিনি তাওরাতের সত্যায়ন করেছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, আমি তাকে ইনজিল প্রদান করেছি, যা তাওরাতের সত্যায়নকারী। (সুরা আলে ইমরান ৫০)

আসমানে উঠিয়ে নেয়া

ইহুদি চক্রান্তের ফলে ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, বরং আল্লাহ তাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা নিসা ১৫৮)

দুনিয়া থেকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উত্তোলিত হওয়া

ঈসা (আ.) ছিলেন একমাত্র নবী, যাকে আল্লাহ জীবিত অবস্থায় আসমানে উত্তোলন করেছেন। কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা ঈসাকে হত্যা করেনি এবং শূলে চড়ায়নি; বরং তাদের কাছে তা সন্দেহজনক করে দেওয়া হয়েছিল। (সুরা নিসা ১৫৭)

হজরত ঈসা (আ.)-এর জীবনের প্রতিটি ঘটনা আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। তিনি আল্লাহর প্রেরিত এক বিশেষ রসুল, যার জীবন থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আল্লাহর এ বান্দার প্রতি বিশ্বাস রাখা আমাদের ঈমানের অংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:০৭   ২২ বার পঠিত