বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত বানিজ্য ও ভিসা বন্ধ রাখলে মোদি এবং সোনিয়া গান্ধী সবাই বসে কপাল ঠোকাঠুকি করতে পারবে কিন্তু দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে পারবে না, এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে, সাহিত্যিক সাংবাদিক কালাম ফয়েজী রচিত ‘নেতা ও কবি’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে “বিজয়ের ৫৩ বছর: আমাদের অর্জন” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভাটির আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমিটি।
সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৯০ শতাংশ। আমরা তো শুধু ইলিশ মাছ পাঠাই, তারা সবকিছুই পাঠায়। সুতরাং ভিসা এবং এলসি এসব যদি বন্ধ থাকে তাহলে ভারতের দুর্ভিক্ষ ঠেকানো সম্ভব না।‘
তিনি বলেন, ‘আমাদের যত দোষ ত্রুটি আছে এটা কতটুকু রিফর্ম করব তা আমাদের বিষয়। আমাদের তো একটা ফরেন পলিসি আছে। আমরা বলেছি সকল দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব কিন্তু কোন প্রভুত্ব না। শুধু ভারতের সঙ্গে নয় পুরো বিশ্বের সঙ্গে আমাদের ফরেন পলিসি থাকতে হবে। ছোট বড় দেশ বলে কোন কথা নাই। প্রতিটা দেশই কারো না কারো উপর নির্ভরশীল। আমেরিকা এত বড় একটা দেশ তাদের অস্ত্র বানানো ছাড়া কোন কারখানা নেই। কিন্তু তাদের পোষাকের জন্য বাংলাদেশ ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। সুতরাং তারাও নির্ভরশীল কোন না কোন দেশের উপর। সুতরাং ভারত নিজেদের পায়ে নিজের্ইা কুড়াল মারছে।‘
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব না বুঝে তাহলে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক মুখোমুখি হওয়া স্বাভাবিক। আজকে তারা নেপালের সঙ্গে বন্ধুত্ব হারিয়েছে, মালদ্বীপ ও ভুটানের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হারিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক আগেই হারিয়েছে। এখন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদেরকে সম্পর্কের কথা ভাবতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভিতর সব গুলো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়ে তারা কিভাবে চলবে। কোন দেশই ভারতের সঙ্গে আপোষ করছে না। ভারতের অবস্থা বাঘ ও শিয়ালের গল্পের মত হয়ে গেছে।‘
তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ভাবতে হবে আপনারা বাংলাদেশের জনগণের সাথে চলবেন, নাকি শুধু একটা দলের সঙ্গে চলবেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে ভারতের ব্যবসার পার্থক্য নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সাথে তাদের ব্যবসায় ৬৪ ভাগ রাজস্ব আয় হয় আর এই ব্যবসা ব্যহত হলে ভারতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রধান আলোচক বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘৫৩ বছরে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। ১৯৭৪ সালের পর দূর্ভিক্ষ হয়নি এটা একটা অর্জন, ১৯৭০ এ মহাপ্লাবন হয়নি এটা একটা অর্জন। আমরা কৃষি, গার্মেন্টস শিল্প এবং রেমিটেন্সের দিক দিয়ে বিশ্বে এক নম্বরে আছি, এটাও আমাদের অর্জন। ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে বাংলাদেশ এমন একটা অবস্থানে আছে এই অবস্থানকে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা কোন ব্যাপারই না। প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। তিনি কালাম ফয়েজী থেকে তার ব্যতিক্রমী প্রবন্ধ গ্রন্থ নেতা ও কবি উপহার দেয়ার জন্য তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান দৈনিক খোলাবাজার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম কলিম। লিখিত বক্তব্যে জনাব গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, নেতা ও কবি প্রকাশনা উৎসবে আমার স্ব-শরীরে হাজির থাকা দরকার ছিল। কিন্তু আমি উপস্থিত না থাকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি নেতা ও কবি গ্রন্থের প্রতিটি লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। ৩৮টি প্রবন্ধের একশব্দের শিরোনামে লেখা আমাকে আলোড়িত করেছে। আমি লেখকের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
আলোচনা সভাটির সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহিন। সঞ্চালনা করেন দৈনিক খোলাবাজার পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, জাগ্রত বাংলাদেশের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম কলিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিএনপি নেত্রী রিটা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা নুর আহমেদ, শাহীন মুহাম্মদ সোলাইমান মোল্লাহ, এস.এম মিজানুর রহমান, মামুন সারওয়ার, রমিজ উদ্দিন রুমী, আসাদুজ্জামান বাবুল, আবু হায়দার মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৭:৪২ ৯ বার পঠিত