আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজশাহীবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি) স্থাপন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
রবিবার রাজশাহী মহানগরীর বাজেসিলিন্দা এলাকায় অধিগ্রহণকৃত নিজস্ব জমিতে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়।
রামেবি’র উপাচার্য প্রফেসর ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
রামেবি’র কোষাধ্যক্ষ ডা. মো. জাকির হোসেন খোন্দকারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সল আলম।
এসময় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা ড. কেরামত আলী প্রমুখ।
সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, নগরীর সুধীজন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অধিভুক্ত বিভিন্ন মেডিকেল ও নার্সিং কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার আওতাধীন বড় বনগ্রাম মৌজা, বাজেসিলিন্দা ও বারইপাড়া মৌজার অংশ নিয়ে মোট ৬৭.৬৭৯২ একর জমির উপর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পটি দুটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১২শ শয্যাবিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল ভবন, যা বেসমেন্টসহ ১২ তলা। এই হাসপাতাল ভবনটির সর্বমোট আয়তন হবে প্রায় ১২ লক্ষ বর্গফুট। বিশ্বমানের সকল সুবিধাদি এখানে বর্তমান থাকবে। এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইসিইউ, অত্যাধুনিক ওটি রুম ও পোস্ট অপারেটিভ রুমসমূহ থাকবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সহকারে পর্যাপ্ত ওয়ার্ড ও কেবিনের ব্যবস্থা থাকবে। কেবিন এবং ওয়ার্ডের বেডসমূহে মেডিকেল গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা থাকবে। রোগীদের নিকট হতে স্যাম্পল কালেকশনের পর মনুষ্য পরিবহন ব্যতিরেকেই পাইপ লাইনের মধ্য দিয়ে নিউমেটিক প্রেসার এর মাধ্যমে সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতালে বৃহদায়তন ২২টি লিফটের পাশাপাশি থাকবে ৪টি এসকেলেটর। হাসপাতালে বিদ্যুৎ সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন রাখবার লক্ষ্যে তিন স্তরের বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল ভবনের জন্য উন্নতমানের দুটি আলাদা বৃহদাকার পাওয়ার জেনারেশন ইউনিটের ব্যবস্থা থাকবে। অগ্নিসংক্রান্ত দুর্ঘটনা এড়াবার লক্ষ্যে ভবনের অভ্যন্তরীণ ফাইয়ার ফাইটিং ব্যবস্থার পাশাপাশি, অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে একটি সেটেলাইট ফায়ার স্টেশন নির্মিত হবে। এছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা থাকবে এবং থাকবে আধুনিক নার্স কলিং সিস্টেম।
প্রথম পর্যায়ের নির্মাণের শেষেই, যাতে করে এই ক্যাম্পাস হতে বিশ্ববিদ্যালয় যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা যায় সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন, উপাচার্যের বাসভবন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিনটি ডরমেটরী, একটি মর্গ, একটি স্কুল, একটি মসজিদ, তিনটি বিদ্যুতের সাব-স্টেশন, একটি স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশন, এছাড়াও নির্মিত হবে সীমানা প্রাচীর, সুদৃশ্য তিনটি গেইট, বিশটি নিরাপত্তা চৌকি, যাতায়াতের জন্য রাস্তা, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। সর্বোপরি এই হাসপাতালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো এর পরিবেশ। পরিবেশের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে এখানে থাকবে প্রায় ৯ একরের একটি জলাধার। এটি পানির আধার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৭:৩৯ ৭ বার পঠিত