শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

তথ্য-প্রযুক্তি খাত উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি : ডিসিসিআই

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » তথ্য-প্রযুক্তি খাত উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি : ডিসিসিআই
শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪



তথ্য-প্রযুক্তি খাত উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি : ডিসিসিআই

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন, যথাযথ বাস্তবায়ন, কৌশলগত বিনিয়োগ, সরকারি ও বেসরকারিখাতসহ সকল অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা জরুরি।

আজ রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই ভবনে আয়োজিত ‘তথ্য-প্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংষ্কার’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন ।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে, যা সকলকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিদ্যমান নীতিমালাসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন করা গেলে, নাগরিক সেবার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরো সহজতর হবে এবং বর্তমান সরকার এ বিষয়টিকে অধিক হারে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে তিনি জানান।

সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া কখনই যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ, রপ্তানি পরিসংখ্যানসহ অন্যান্য তথ্যে বেশ অসংঙ্গতি ছিল, যা নিরসনে বর্তমান সরকার বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সংষ্কার কমিশন গঠন করেছে, যার কার্যক্রম অব্যাহত আছে, যেখানে দেশের সকল স্তরের নাগরিকদের পাশাপাশি বিশেষ করে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ নিজেদের প্রত্যাশার প্রস্তাব পেশ করতে পারে, যার ভিত্তিতে সংষ্কার কার্যক্রম আরো জোরালো হবে বলে তিনি আশা করেন।

অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবা, সফটওয়্যার এবং যন্ত্রপাতিসহ তথ্যপ্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, তবে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৃহত্তম জনগোষ্ঠী থাকা সত্তেও আমাদের আয় ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, এখাতে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চতর মূল্য সংযোজন পরিসেবা প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করাসহ সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালুচেইনে উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারিত করার আহবান জানান। এছাড়াও পণ্যের ডিজাইন, অ্যাসেম্বলি প্যাকেজিং এবং টেস্টিং (এপিটি) প্রভৃতি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং এক্ষেত্রে উদীয়মান আইওটি বাজারের জন্য ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের (আইডিএম) সুযোগগুলি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, সফ্টওয়্যার ও পরিসেবা রপ্তানি ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং ২০২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

এখাতে দক্ষতার ব্যবধান এবং পরিকাঠামোর অভাবের কথা উল্লেখ করে আশরাফ আহমেদ বলেন, এই ব্যবধান মেটাতে শিক্ষা, লজিস্টিক পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমানের মূল্য সংযোজন তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন এবং রপ্তানি প্রণোদনার গুরুত্বের উপর তিনি জোর দেন। এখাতের সম্ভাবানাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন যথাযথ বাস্তবায়ন, কৌশলগত বিনিয়োগ, সরকারি, বেসরকারি খাতসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যকার সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য বলে ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমাদের তৈরি পোষাক শিল্পের পর তথ্য-প্রযুক্তি খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, যেখানে বিশেষকরে তরুন জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়াগ সম্প্রসারণ সম্ভব। দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের অনুমতি প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে বিডার পক্ষ হতে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

বন্ডস্টেইন টেকনোলোজিস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশে ২হাজার ৬০০ টির বেশি আইটি কোম্পানি কাজ করছে, যা ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে এবং এখাতের বাজারের আকার ২.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ৪৫০টি বাংলাদেশি কোম্পানী তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে।

তিনি বলেন, সফ্টওয়্যার পরিসেবার সীমিত সুযোগের সাথে বাংলাদেশের ডিভাইস উৎপাদন ক্ষমতা নেই। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে আইটি পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, রপ্তানি বাড়াতে তিনি স্থানীয় আইসিটি কোম্পানিগুলোকে বিদেশে অফিস স্থাপনের অনুমতি দেওয়া এবং আইসিটি পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, আইসিটি উদ্যোক্তারা সহায়ক নীতির অভাব এবং ঋণ প্রাপ্তিতে কঠোর জামানত প্রক্রিয়া মুখোমুখি হচ্ছে। এখাতের বিকাশে পণ্যেও মেধাস্বত্ব অধিকারের সুরক্ষা অতীব জরুরী।

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) মোহাম্মদ জাকির হাসান, বেসিস-এর প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড-এর চীফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান এবং ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ লিয়াকত আলী অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) মোহাম্মদ জাকির হাসান বলেন, দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই। এখাতের অবকাঠামো উন্নয়ন এখনও আশানুরূপ নয়, যেখানে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

বেসিস-এর প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিতকরণে কর প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। তিনি টেকসই ও সবুজ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করেন। তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক সভরেন ক্রেডিট গ্যারিন্টি স্কীম চালু করা যেতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এছাড়ও তিনি মেধাসত্ত আইনের কার্যকর প্রয়োগের উপর জোরারোপ করেন।

বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেড-এর চীফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, তথ্য-প্রযুক্তিখাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য। বিশেষকরে তিনি টেলিকম এ্যাক্ট-এর সংষ্কারের প্রস্তাব করেন।

ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নীতির অভাবে আমরা দেশে এফডিআই আকৃষ্ট করতে পারছি না। তিনি আইটি ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য শুল্ক ও কর কাঠামো সংস্কারেরও অনুরোধ করেন। তিনি আরো বলেন, সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে বাংলাদেশের ভালো ডিজাইনের হাউস রয়েছে, তাই সরকারি ও বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।

ঢাকা চেম্বারে উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী মুক্ত আলোচনা সঞ্চালনা করেন, যেখানে আলোচকবৃন্দ অপ্রতুল অবকাঠমো, প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাব, ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা, দক্ষ জনবলের সংকট এবং সহায়ক কর ও শুল্ক কাঠমোর অনুপস্থিতির কারণে দেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে কাঙ্খিত বিকাশ পরিলক্ষিত হচেছ না বলে মত প্রকাশ করেন।

ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচলনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সরকারি-বেসরকারিখাতের অতিথিবৃন্দ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫১:০৯   ১৯ বার পঠিত