রসুলুল্লাহ (স.)-এর নবুয়ত পাওয়ার পর জিনেরা বিশ্বজগতের ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে। একসময় তারা আসমান পর্যন্ত যেতে পারত, কোনো বাধা দেয়া হতো না। অথচ তারা দেখতে পেল, আসমানে যাওয়ার চেষ্টা করলে উল্কাপিণ্ড দিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হয়।
জিনেরা এ পরিবর্তনের কারণ জানতে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। এর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাদের একটি দল বিশ্ব পরিভ্রমণে বের হয়। একদিন রসুলুল্লাহ (স.) কিছু সাহাবির সঙ্গে তায়েফের পথে উকাজ বাজারে যান। নাখলা নামে একটি স্থানে তিনি ফজর নামাজ আদায় করছিলেন।
জিনদের সেই দলটি তখন সে পথ দিয়ে যাচ্ছিল। কোরআন শুনে তারা বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারল। কোরআনের আয়াত শুনে তাদের অন্তর নরম হয়ে গেল। কোরআনের সত্যতার সামনে তারা মাথা ঝুঁকিয়ে দিল।
তারা কেবল নিজেরাই ঈমান আনেনি, তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গিয়ে ঈমানের দাওয়াত দিয়েছে। তাদের সামনে আল্লাহর বর্ণনা দিয়েছে। যাতে তারা আল্লাহ ও তার রসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে।
এসব বিষয় নিয়ে জিনদের নামে কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা নাজিল হয়েছে। জিনদের প্রসঙ্গে এ সুরায় বলা হয়েছে যে, রসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর হুকুম মোতাবেক মানুষকে ঈমান ও তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন।
কোরআনের প্রতি জিনদের ঈমান আনা, রসুলুল্লাহ (স.)-এর নবুয়ত লাভ করার পর জিনদের অবস্থা, সব মসজিদ আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন না, আর কিয়ামতের সময়ও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না, ইসলামের দাওয়াত সবার জন্য ইত্যাদি বিষয়ও এ সুরায় আলোকপাত করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন, ‘বলো, আমি প্রত্যাদেশের মাধ্যমে জেনেছি যে জিনদের একটি দল কোরআন শুনেছে এবং তাদের সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি, যা সঠিক পথনির্দেশ দেয়। তাই আমরা এতে বিশ্বাস করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরিক করব না।’ (আয়াত ১-২)
সুরা জিন পবিত্র কোরআনের ৭২ তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর ২ রুকু, ২৮ আয়াত। সুরাটিতে জিন জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরার কেন্দ্রীয় বিষয় এই বার্তা দেয়া যে মানুষের মতো জিনেরাও শরিয়ত পালনে শামিল রয়েছে।
এ সুরায় বলা হয়েছে, জিনেরা মানুষের মতোই বিভিন্ন বিধান পালনের জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, সৎ-অসৎ সবই আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০২:১৩ ১৩ বার পঠিত