বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে নারদিয়া সিম্পসন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলে।
বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দলের আন্তর্জাতিক সস্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ এবং অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিনটন পোবকে ও প্রথম সচিব লারা অ্যাডামস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের সাথে দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ ও উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ের পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকার চলে যাওয়ার পরে আমরা কী ভাবছি, অন্তর্বর্তী সরকার বিগত এক মাসে কী করেছে এবং তাদের একমাস কেমন গেলো, আগামী দিনে আমাদের প্রত্যাশা কী এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
‘এই অঞ্চলের জিও পলিটিক্স এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ সম্পর্কিত বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সহযোগিতা ভবিষ্যতে কিভাবে আরো সম্প্রসারিত করা যায় এবং অস্ট্রেলিয়ায় অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী রয়েছে বলেই বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে তারা কি করতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য কত সময় লাগতে পারে তারা (অস্ট্রেলিয়া) জানতে চেয়েছে। পাশপাশি, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য কি কি পরিবর্তন দরকার এবং সেগুলো কীভাবে এগুচ্ছে সে বিষয়েও তারা জানতে চেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মূলত সার্বিক আলোচনার পর তাদের ধারণা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে আগামীতে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক একটি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।’
এ সময় সাংবদিকরা নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কিত বিষয়টি খোলাসা করে জানতে চাইলে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক সময়ের কথা তো বলেই যাচ্ছি। সময়ের যৌক্তিকতা এখানে যারা স্টেকহোল্ডার আছে তারা বিবেচনা করবে। আমরা আসলে এখনই একটা টাইম ফ্রেম করে দিচ্ছি না, একটা সময় বেঁধে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিও করতে চাচ্ছি না।’
আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি সরকার সফলভাবে তাদের কাজগুলো করুক। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন চলে গেছে, নতুন কমিশন গঠন করতে হবে এবং এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাজটা শুরু হতে হবে। আমি নিশ্চিত সেই কাজগুলো তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) খুব দ্রুত করবে। কারণ, একদিকে ফায়ার ফাইটিং করতে হবে এবং অন্যদিকে আমাদের দেশে যে প্রাতিষ্ঠিানিক সমস্যাগুলো হয়ে গেছে সেগুলোর সমাধান করে নির্বাচনী কার্যক্রমের দিকে তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।’
বিএনপি’র সিনিয়র এই নেতার বক্তব্য হচ্ছে ‘সকলের একই প্রশ্ন, এই কাজগুলো কত তাড়াতাড়ি হবে, কতদিন লাগতে পারে এবং কবে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহায়তা করছি।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা জাতির প্রত্যাশা যে এই সরকার জাতির আশা-আকাংখা পুরণে সমর্থ হবে। আমরা এই সরকারকে সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি এবং দিয়ে যাব। বাংলাদেশের মানুষ যে আগামীর বাংলাদেশ তৈরির নতুন স্বপ্ন দেখছে, এটা আমাদের সকলকে মিলে করতে হবে। এটা কেউ একা করতে পারবে না, জাতির একটা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকতে হবে। সেখানে আমাদের সকলকে এক থাকতে হবে, সেই কথাগুলো আমরা বলেছি।’
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৩:০৪ ২৪ বার পঠিত