মুসলিম বলতেই জান্নাতের স্বপ্ন দেখে। জান্নাতই মুমিনের আসল আবাসস্থল। মৃত্যুর পর অনন্তকাল জান্নাতে বসবাস করার স্বপ্ন সবার থাকলেও সবার জন্য কি সহজ হবে? যারা ঈমান এনে আল্লাহর বিধান মত চলবে তারাই জান্নাতে যেতে পারবে।
মুমিনের জন্য জান্নাতে যাওয়া সহজ হবে, যদি সে আল্লাহর পথে চলে। নবীজির বলে দেয়া পথে চলে। ইবাদত আর আমলে সলিহা করে। নবীজি এমন ছয়টি আমলের কথাও বলেছেন, কেউ যদি এগুলো করে তাহলে নবীজি তার জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ তাআলা ও রসুলুল্লাহ সা. চান প্রতিটি মুমিন যেন জান্নাতবাসী হয়। তাই পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জান্নাতে যাওয়ার সুস্পষ্ট পথ বাতলে দেয়া হয়েছে।
জান্নাতে যাওয়ার আমল
মহানবী সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি দু’চোয়ালের মধ্যস্থল তথা মুখ ও দু’পায়ের মধ্যস্থল তথা যৌনাঙ্গের দায়িত্ব নেবে আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নেবো।’ (সহিহ বুখারি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪১১) অপর হাদিসে মহানবী সা. বলেন, ‘তোমরা ছয় জিনিসের দায়িত্ব নাও, আমি তোমাদের জান্নাতের দায়িত্ব নেবো।’
১. যখন কথা বলবে মিথ্যা বলবে না। ২. যখন আমানত রাখা হবে তা খিয়ানত করবে না। ৩. যখন অঙ্গীকার করবে তার খেলাপ করবে না। ৪. চলার সময় চোখকে নিম্নগামী রাখবে। ৫. তোমাদের হস্ত নিয়ন্ত্রণ রাখবে ও তোমাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করবে।’ (ইবন কাসির)
রসুল সা. বলেছেন, ‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এগুলোর কোনো একটি পাওয়া যাবে, সে ওই দোষ ত্যাগ না করা পর্যন্ত নিফাকবিশিষ্ট বলে গণ্য হবে। দোষগুলো হলো- ১. তার কাছে কোনো কিছু আমানত রাখলে খিয়ানত করে। ২. কথা বললে মিথ্যা বলে। ৩. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। ৪. কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করলে গালিগালাজ করে।’ (মিশকাত)
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’। (সুরা মুনাফিকুন-১) রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘সত্যবাদিতা মানুষকে সত্যতার পথে টেনে নিয়ে যায়, আর সততা টেনে নিয়ে যায় জান্নাতের দিকে। আর মিথ্যা টেনে নিয়ে যায় পাপাচারের দিকে, পাপাচার নিয়ে যায় জাহান্নামের দিকে।’ (বুখারি ও মুসলিম) রসুল সা. আরো বলেন, ‘তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন না এবং গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না। তারা হলো- ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যুক শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।’ (সহিহ মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর ও তোমাদের ওপর ন্যস্ত আমানতের খিয়ানত করো না। অথচ তোমরা (এর গুরুত্ব) জানো।’ (সুরা আনফাল-২৭)
রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি- যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিশ্রুতি দেয় তখন ভঙ্গ করে এবং যখন তার কাছে কিছু আমানত রাখা হয় তখন তার খিয়ানত করে। যদিও সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে ও নিজেকে মুসলমান বলে মনে করে।’ (সহিহ মুসলিম, বুখারি) রসুলুল্লাহ সা. আরো বলেন, ‘যে আমানতদার নয় তার ঈমান নেই এবং সে অঙ্গীকার পালন করে না তার দ্বীন নেই।’ (আহমদ, বাযযায, তারবানি, বায়হাকি, মিশকাত)
অঙ্গীকার ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা বলে, ‘আর তোমাদের অঙ্গীকার পূরণ করবে। কারণ অঙ্গীকার পূরণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল-৩৪)
রাসুল সা. বলেন, ‘চোখের জিনা হলো-বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দান করা।’ (মিশকাত-৮৬) রসুল সা. আরো বলেন, ‘বিচার দিবসে সব চোখ ক্রন্দন করবে- তিনটি চোখ ব্যতীত। যে চোখ বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়নি, যে চোখ আল্লাহর পথে জাগ্রত রয়েছে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে মাছির ডানা পরিমাণ পানি বের করেছে।’
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বিচার দিবসে তাদের জিহ্বা, হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা করেছে।’ (সুরা নূর-২৪) রসুল সা. বলেছেন, ‘হাতের জিনা হলো অবৈধ কিছু স্পর্শ করা’। (বুখারি, মুসলিম, রিয়াদুস সালেহিন-১৬২২)
আল্লাহ তাআলা সুরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে নারীদের যৌনাঙ্গ হিফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন। সূরা মুমিনুনের ৫ নং আয়াতে বলেছেন, ‘মুমিন হলো তারা যারা যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। অর্থাৎ স্ত্রী ও শরিয়তসম্মত দাসীদের ছাড়া সব পর নারী থেকে যৌনাঙ্গের সংযত রাখে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৪:২৫ ১৫ বার পঠিত