বিগত সরকারের সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে এ ধরনের অন্যায়ের কোনো স্থান দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বর্তমান কমিশনার মো. মাইনুল হাসান। তিনি বলেন, দুর্নীতি, অনিয়মের উর্ধ্বে পেশাদার বাহিনী হিসেবে পুলিশ বাহিনীকে তৈরি করা হবে।
শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘কমিশনারস মিট দ্য প্রেসে’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। দায়িত্বগ্রহণের পর এটিই তার প্রথম সংবাদ সম্মেলন।
সদ্য সাবেক সরকারের আমলে দুর্নীতির মাধ্যমে পুলিশের সম্পদ অর্জনের যে তথ্য এসেছে এমন দুর্নীতি রোধে আপনি কোন ধরণের ভূমিকা নেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা চাই পেশাদার পুলিশ বাহিনী তৈরি হবে। এখানে দুর্নীতি, অনিয়ম অন্যায়ের কোনো স্থান থাকবে না। এরজন্য আমাদের দিক থেকে যেমন কর্মপরিকল্পনা থাকবে এর সাথে জনগনের সাপোর্টও লাগবে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কারা অপরাধমূলক কাজগুলো করছে, নিয়ম বহির্ভূত কাজ করছে, এসব তথ্য আপনারাও আমাদেরকে দেবেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। আমাদের যেমন চেষ্টা থাকবে অনুরুপভাবে যারা সেবা গ্রহণকারী এবং আপনারাও তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন, তাহলে মনে হয় আমরা সুন্দর পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে পারব।’
পুলিশের কিছু অপেশাদার ও উচ্চাভিলাষী সদস্য পুরো বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
নব নিয়োগপ্রাপ্ত ডিএমডি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের অত্যন্ত সংকটকালে আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছি। বিগত সময়ের উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। এর ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং বিগত সরকারের পতনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছিল। ডিএমপিসহ সারাদেশে অনেক পুলিশ সদস্য আহত এবং নিহত হয়েছেন। প্রাণভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। অনেক স্থানে আমাদের অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ট্রাফিকের প্রায় সকল অফিস ও বক্স ভাঙচুর হয়েছে। ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে ২২টি থানা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক যানবাহন অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুণ্ঠিত হয়েছে। এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন পুলিশ বাহিনী ইতোপূর্বে কখনো হয়নি।
মাইনুল হাসান আরও বলেন, এমন পরিস্থিতে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করি যাতে পুলিশ সদস্যগণ ভয় না পেয়ে দ্রুত কাজে ফিরে আসেন। কিন্তু ইতোমধ্যে কিছু উচ্চাবিলাসী ও অপেশাদার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাপক ক্ষোভ জন্মায় এবং নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মবিরতি শুরু করে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সুযোগ্য নেতৃত্বে আইজিপি, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ আমি নিজে রাজারবাগ ও মিরপুর পুলিশ লাইন্সসহ বিভিন্ন পুলিশ স্থাপনায় যাই। তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করে কিছু দাবি তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়। বাকিগুলো দ্রুততম সময়ে মেটানোর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পুলিশ সদস্যগণ তাদের কর্মস্থলে ফিরে আসেন এবং পুলিশী দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:২০:০৫ ১৫ বার পঠিত