শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগের লক্ষ্যে শিক্ষাক্রমের রূপান্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন তাদের অর্জিত জ্ঞান বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে, সেই জ্ঞান যেন তারা জীবনের নানা বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে চিন্তা করতে পারে এবং তাদের যেন ন্যূনতম দক্ষতা থাকে সেই লক্ষ্যে শিক্ষা প্রক্রিয়াকে রূপান্তরের কাজ চলছে। তত্ত্বীয় জ্ঞানের প্রায়োগিক দিকটা শেখালে শিক্ষা আনন্দময় হয়ে ওঠে। এজন্যই শিক্ষাক্রম রূপান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষকদেরও সেভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এর আয়োজন করে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শহুরে অভিভাবকরা বলছেন, আমাদের সন্তান ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের শিক্ষা নিয়ে কী অর্জন করবে? আমরা তো আমাদের সন্তানকে বিজ্ঞানী বানাতে চাই। কিন্তু তাদের সেই উপলব্ধি থাকা উচিত যে, প্রাত্যহিক জীবনে নানান বিষয়ে শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করাটা পাঠ্যপুস্তক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চাইতেও অনেক সময় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, প্রান্তিক পর্যায়ের মা-বাবাদের মধ্যে এই বিষয়ে কোনো উষ্মা নেই। তাদের অভিযোগ কম। কেননা তাদের সন্তান ধান কাটার সময়টাতে, তাদের সহযোগিতা করার সময় যা করতে হয়, সেটা তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার মধ্যে থাকলে তারা খুশি হয়। কারণ তার প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে তা সম্পৃক্ত। কিন্তু সেটাকে যদি আমরা প্রত্যাখ্যান করি, শিক্ষাকে যদি অভিজাত মানসিকতা সৃষ্টির একটা প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়; সমাজের সবার যদি লক্ষ্য হয় গাড়ি-ঘোড়ায় চড়া, তাহলে গাড়ি আর প্রস্তুত হবে না, ঘোড়াও প্রতিপালন হবে না। কেননা শুধু অভিজাত বা উচ্চ প্রশাসনিক পদ দিয়ে সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষায় সেই রূপান্তর হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, বিশেষায়িত জ্ঞান উচ্চ শিক্ষার পর্যায়ে অবশ্যই নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু যেই পদ্ধতিটা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল, তা হলো বিশেষায়িত জ্ঞান বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়া হচ্ছে। আর উচ্চশিক্ষায় গিয়ে গতানুগতিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বিশেষায়িত জ্ঞান দিতে হবে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমাদের শিক্ষার্থীদের এত বেশি গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষা দেওয়া উচিত না যে, তারা নিরুৎসাহিত হয়। আমাদের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, একটা বিশাল সংখ্যক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী এসএসসির পরে এইচএসসিতে গিয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে উৎসাহিত হয় না। তাই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বিজ্ঞান ও গণিত আমাদের শেখা উচিত।
শিক্ষার্থীদের মানসিক পরিবর্তনের গুরুত্ব উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তথ্যকে জ্ঞানের রূপান্তর এবং জ্ঞানকে দক্ষতায় রূপান্তর করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিক পরিবর্তনটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজকে একজন শিক্ষার্থী যা শিখছে ভবিষ্যতে তার প্রয়োজন নাও হতে পারে। ভবিষ্যতে নতুন যা আসবে তা শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ ইদ্দিন আহমদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহিম।
বিজয়ীদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করেন ইংরেজি বক্তৃতায় গ-গ্রুপে প্রথম হওয়া পাবনার স্কয়ার হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জেরিন রাফা, কলেজ পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের রাশেদুল ইসলাম ইয়ন এবং নির্ধারিত বক্তৃতায় গ-গ্রুপের প্রথম হওয়া রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোছা. আয়শা সিদ্দিকা।
আলোচনা শেষে শিক্ষামন্ত্রী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, মেডেল ও সনদপত্র বিতরণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৪:০৩ ১৬ বার পঠিত