জাল টাকার আধুনিক প্রবর্তক লিয়াকত হোসেন জাকিরসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর (ডিবি) লালবাগ বিভাগের একটি দল।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো- লিয়াকত হোসেন জাকির, লিমা আক্তার রিনা, সাজেদা আক্তার, রোমানা ইসলাম ও মমতাজ বেগম।
এডিশনাল ডিআইজি মশিউর রহমান বাসসকে বলেন, ঢাকা মহানগর ডিবি লালবাগ বিভাগ আজ সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী, দনিয়া ও কদমতলী এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেন ওরফে মাজার জাকিরসহ ৫জনকে জাল টাকা তৈরি ও বিক্রয়ের দায়ে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, জাল টাকা তৈরির সময় হাতেনাতে গ্রেফতারকালে দুইটি বাসা থেকে তৈরিকৃত প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা এবং আরো প্রায় ৩ কোটি জাল টাকা তৈরি করার মতো বিশেষ কাপড়, কাগজ, বিশেষ ধরনের কালি, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, চারটি প্রিন্টার, বিভিন্ন সাইজের কয়েক ডজন স্ক্রিন ডাইস, সাদা কাগজ, হিটার মেশিন, স্কেল, কাগজ কার্টার, রাবার ব্যান্ড, কার্টুন, নিরাপত্তা সুতা, খামসহ জাল টাকার হরেক রকম মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাসসকে আরও বলেন, কম্পিউটারে গ্রাফিক্স ও ফটোশপের মাধ্যমে নিরাপত্তা সুতা, ওয়াটার মার্ক ও কালার শিফটিং কোয়ালিটিতে সমৃদ্ধ আধুনিক জাল টাকার পথিকৃৎ হলো লিয়াকত হোসেন জাকির। জাল টাকার তৈরিকালে জাকিরের সহযোগী বা অন্য কারখানার লোকেরা ধরা পড়লে জাকির মাজারে মাজারে অবস্থান করে কখনো মাজারের কচ্ছপ, কখনো শোল মাছকে তবারক খাওয়াতে ব্যস্ত থাকে বলে তাকে মাজার জাকির বলা হয়।
মশিউর রহমান বলেন, গত ২৫ বছর ধরে জাল টাকার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা করার পাশাপাশি বিভিন্ন মানের জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ লিয়াকত হোসেন জাকির ২০১২ সাল থেকে পাঁচশত ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করলেও বর্তমানে জনসাধারণ যাতে সন্দেহ না করে সেজন্য বড় নোট জাল করার পাশাপাশি ১০০ ও ২০০ টাকার নোটও সে জাল করে থাকে। এর আগে ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২০ সালে জাল টাকার বড় কারখানাসহ ধরা পড়লেও ভালো হয়নি জাকির। বরং ঢাকা ও আশপাশ থেকে বারে বারে ধরা পড়ার কারণে গ্রেফতার এড়াতে সে খুলনা ও বাগেরহাটের বিলাসবহুল এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে থেকে জাল টাকা তৈরি ও বিক্রি করার কাজ করে আসছিল।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জাল টাকার ব্যবসায়ীদের খুলনা বা বাগেরহাটে গিয়ে টাকা আনা নেয়া করা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জাকির হোসেন তারই এক পাইকারি জাল টাকা বিক্রেতা লিমা আক্তার রিনার ঢাকায় দনিয়ার বাসাতে জাল টাকার অস্থায়ী কারখানা গড়ে তোলে।
এডিশনাল ডিআইজি মশিউর রহমান বলেন, বর্তমানে কাগজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের কালি ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাকির প্রতিটি ১০০০ টাকার একশটি নোটের এক বান্ডেল ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। গত ১২ বছরে জাকির কখনো জাল টাকা খুচরায় বিক্রি করে নাই। পুরুষ মহিলা মিলে তার প্রায় ১৫/২০ জন কর্মচারী আছে যাদেরকে জাল টাকা তৈরীর কাজে সহযোগিতা করার কারণে সে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতন দিতো।
ব্যক্তি পর্যায়ে জাল টাকা বিক্রি করলে ধরা পড়ে গ্রেফতার হতে পারে। গ্রেফতারের ঝুকি এড়ানোর জন্য অনলাইনে (বিশেষত ফেসবুক ও মেসেঞ্জার) দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে জালটাকা বিভিন্ন স্থানে পৌছে দিতো। জাকির ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিভিন্ন টিমের কাছে ৬ বার গ্রেফতার হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৭:১৩ ২৫ বার পঠিত