মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, খামারিরাই প্রাণিসম্পদ খাতের প্রকৃত সেলিব্রেটি।
তিনি আজ শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৪’ ও ‘ডেইরি আইকন সেলিব্রেশন’ উপলক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বান্ধব সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো আত্মনির্ভরশীল, সমৃদ্ধ এবং মেধাসম্পন্ন জাতি গঠন একথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, এলক্ষ্যে বর্তমান সরকার দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে জনসাধারণের প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করছে । এছাড়াও এই খাতকে রপ্তানিমুখী করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ ও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে লাইভস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এলডিপিপি) উল্লেখযোগ্য। এ প্রকল্পটি ডেইরি খাতের উন্নয়নে কাজ করছে।
পুরস্কারপ্রাপ্ত খামারিদের অভিনন্দন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে যেমন দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন, তেমনি আপনারা নিজেদেরকেও সমৃদ্ধ করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি খামারিদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বড় গবেষক খামারি হিসেবে অভিহিত করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র পরিচালনা, মানুষের কথা ভাবা ও দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেমন কাজ করছেন, তেমনি এসব কাজের বাইরে যখনই সময় পান তখনই গণভবনে এধরণের কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এটি খামারিদের প্রতি তাঁর আন্তরিক মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্রগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর।
অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উপস্থাপিত প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ড. এ বি এম খালেদুজ্জামান। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও এলডিডিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহিম।
আব্দুর রহমান বলেন, দুধ শুধু একটি আদর্শ খাবারই কেবল নয় বরং মেধাবী জাতি গঠনেও দুধ পান করা অপরিহার্য। তাই নিয়মিত দুধ পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দুধ যেমন পুষ্টির জন্য অপরিহার্য, তেমনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করাও অপরিহার্য বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, পরবর্তীতে এ ধরণের অনুষ্ঠান পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় করা হবে এবং সে অনুষ্ঠানে খামারিরা প্রধান স্টেকহোল্ডার হবেন। তিনি গুড়াদুধ আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য অধিকহারে শুল্ক আরোপের বিষয়ে খামারিদের দাবীকে সাধুবাদ জানান এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে খামারিদের আশ্বস্ত করেন।
উল্লেখ্য, দেশে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে এবছর ডেইরি খামার ক্যাটাগরিতে ২৬টি, পশুখাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরিতে ৯টি, দুধ/মাংস প্রক্রিয়াকরণ ক্যাটাগরিতে ১১টি এবং খামার যান্ত্রিকীকরণ ক্যাটাগরিতে ৫টিসহ মোট ৫১টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিটি পুরস্কারের মূল্যমান এক লাখ টাকা।
মন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে চারটি ক্যাটাগরিতে দেশের দুগ্ধ খাতের ৫১ জন সফল খামারি ও উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট ও পুরস্কারের টাকার চেক তুলে দেন। বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষ্যে খামারিদের এ ধরণের সম্মাননা প্রদান তাদেরকে দুগ্ধ উৎপাদনে আরও উৎসাহিত করবে এবং এ সেক্টরের উন্নতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সারাদেশের জেলা পর্যায়ে র্যালি আয়োজন করা হয়। এছাড়া আগের দিন (শুক্রবার) ঢাকায় দৃষ্টি নন্দন বাইসাইকেল র্যালির আয়োজন করা হয়। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ঢাকার দশটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল মিল্ক ফিডিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো - মিল্কভিটা, প্রাণ ডেইরি, আকিজ ডেইরি, ব্রাক ডেইরি এবং রংপুর ডেইরি।
এছাড়া, এলডিডিপির অর্থায়নে দেশে ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের দুধ পান করানো হয়। ঢাকার বাইরেও প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১টি জেলায় দিবসটি উপলক্ষ্যে নেয়া হয় নানামুখী কর্মসূচি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নির্বাচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়/এতিমখানার শিশুদের দুধ খাওয়ানো, কুইজ কম্পিটিশন, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, র্যালি, সভা, পুরস্কার বিতরণ।
উল্লেখ্য, বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বৈশ্বিক পুষ্টিতে দুধ অপরিহার্য’।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৬:১১ ৩৬ বার পঠিত