রাজশাহী থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জে অভিনব কায়দায় হেরোইনের চালান সরবরাহ একটি চক্র। প্রচলিত রুট এবং উপায়ের বাইরে গিয়ে পাকস্থলিতে করে আনা হতো হেরোইনের চালান।
সম্প্রতি বাহক, ডিলার, পাইকারি ও খুচরা কারবারিসহ ৯ জনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলছে, হেরোইন চোরাচালানের একটি বড় সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছেন তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, হেরোইন ভর্তি প্লাস্টিকের প্যাকেটটি প্রথমে ভালো করে ভাঁজ করা হতো। পরে কালো স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচিয়ে বিশেষ কায়দায় পাকস্থলিতে ঢুকিয়ে রাজশাহী থেকে নিয়ে আসা হতো কেরানীগঞ্জে। আর এই মাদকের চালান নিয়ে প্রতি সপ্তাহে কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় আসতেন রাজশাহীর আব্দুল কাদের এবং রানা। তারা দুজন মূলত বহনকারী।
এরপর কেরানীগঞ্জে হেরোইনের চালান বুঝে নিতেন খুশি আর সুখী। তারা দুজন মূলত হেরোইনের ডিলার। তারাই মূলত হেরোইনগুলো পাইকারি বিক্রি করে দেন মাদক কারবারিদের কাছে।
তৃতীয় ধাপে খুচরা কারবারিরা প্রতি এক গ্রাম হেরোইন বিক্রি করতেন সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকায়।
পুলিশ বলছে, প্রতি সপ্তাহে রাজশাহী থেকে ধূমকেতু এক্সপ্রেসে হেরোইনের চালান নিয়ে ঢাকায় আসে একাধিক বহনকারী। প্রতি চালানে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার বিনিময়ে পাকস্থলিতে করে বাহকরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেন একেকটি চালান এমন তথ্য উঠে এসেছে তদন্তে।
গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ট্রেনে বিশেষ করে রাজশাহী টু ঢাকা রুটে এর আগেও অসংখ্যবার হেরোইনের চালান নিয়ে তারা ঢাকায় এসেছেন। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ট্রেনে অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে কম ঝুঁকি থাকে।
আর এই প্রথম অভিনব কায়দায় হেরোইন চোরাচালানের বিষয়টি তাদের সামনে এসেছে জানিয়ে পুলিশ বলছে, ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে অনেক মাদকসেবী ভিড় করে কেরানীগঞ্জে এমন তথ্যও উঠে এসেছে তদন্তে।
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাব উদ্দিন কবির সময় সংবাদকে জানান,
৪০ থেকে ৫০ গ্রাম করে ছোট ছোট ক্যাপসুল আকারে বানিয়ে তারা পায়ুপথ দিয়ে পেটের মধ্যে প্রবেশ করাতেন। এভাবে একেকজন ২টি করে প্রায় ১০০ গ্রাম হেরোইন বহন করতেন।
‘হেরোইনের বড় বড় ডিলাররা নারী। কারণ নারীদের একটা সুবিধা হচ্ছে, গোয়েন্দা নজরদারির আড়ালে থাকাটা তাদের জন্য সহজ। এই নারীরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার নেন। পরে তারা রাজশাহীর বিক্রেতার কাছে সেই অনুযায়ী মাদক অর্ডার করেন। তখন ওই বিক্রেতারা বাহকদেরকে দিয়ে ক্যাপসুল আকারে পাঠায়। এরপর ডিলার এখান থেকে গ্রহণ করে সেটা বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে’, যোগ করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
শাহাব উদ্দিন কবির আরও বলেন,
কেরানীগঞ্জ যেহেতু একটু নিরিবিলি জায়গা, তাই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই মাদক সেবন করতে এখানে চলে আসেন। হেরোইন যে ক্যাপসুল আকারে পায়ুপথ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে পেটের মধ্যে করে ১০০ গ্রাম করে আনা যায়, এটি আসলে আমাদের জন্য রীতিমতো অভিনব একটি পন্থা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৫:৪৭ ১৪ বার পঠিত