হজের তৃতীয়দিন ১০ জিলহজের কার্যক্রম শুরু হয় মুজদালিফা থেকে। ৯ জিলহজ আরাফার মাঠ থেকে ফিরে এসে মুজদালিফায় অবস্থান করেন হাজিরা। তারপর জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য চলে যান মিনায়। কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে কোরবানি বা হাদির পর মাথামুণ্ডন করে ইহরাম খুলে ফেলেন তারা।
মুজদালিফা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
فَإِذَآ أَفَضْتُم مِّنْ عَرَفَـٰتٍۢ فَٱذْكُرُوا۟ ٱللَّهَ عِندَ ٱلْمَشْعَرِ ٱلْحَرَامِ ۖ وَٱذْكُرُوهُ كَمَا هَدَىٰكُمْ وَإِن كُنتُم مِّن قَبْلِهِۦ لَمِنَ ٱلضَّآلِّينَ
তোমরা যখন আরাফার ময়দান থেকে ফিরে আসবে তখন মাশআরুল হারামের (মুযদালিফায়) কাছে এসে আল্লাহকে স্মরণ করবে, যেমনই করে আল্লাহ তোমাদের পথ বলে দিয়েছেন, তেমনই করে তাকে স্মরণ করবে, নিশ্চয় তোমরা পথভ্রষ্টদের দলে শামিল ছিলে। (সুরা আল-বাকারা ১৯৮)
১. মিনায় গমন
হাজিরা এ দিন মুজদালিফায় ফজর পড়ে মিনার দিকে রওনা হয়ে থাকেন। সূর্য ওঠা পর্যন্ত দোয়া ও জিকির করেন। এরপর তালবিয়া পাঠ করতে করতে মুজদালিফা ত্যাগ করেন।
২. কঙ্কর নিক্ষেপ
মিনায় আসার পথে হাজিরা কঙ্কর সংগ্রহ করেন। কেউ মুজদালিফা থেকে আর কেউ মিনার পাশ্ববর্তী অঞ্চল থেকে কঙ্কর সংগ্রহ করেন। এরপর একে একে তিন জামারায় ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করেন।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য উঠার ১-২ ঘণ্টার মধ্যে কঙ্কর মেরেছিলেন। সে হিসাবে সূর্য পশ্চিমে ঢলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কঙ্কর নিক্ষেপ করা সুন্নত। এভাবে সূর্য উঠা থেকে শুরু করে ১১ জিলহজ সুবহে সাদিক পর্যন্ত তিন দিন কঙ্কর মারা হয়।
জামরাকে সামনে রেখে কাবাকে বামে ও মিনাকে ডানে রেখে অথবা যে কোনোভাবে সুবিধামত দাঁড়িয়ে ডান হাত উঁচু করে আলাদা আলাদাভাবে ৭টি কঙ্কর একে একে নিক্ষেপ করেন হাজিরা। প্রতিবার নিক্ষেপের শুরুতে বলেন, اَللهُ أَكْبَرُ ‘‘আল্লাহু আকবার’’ ‘‘আল্লাহ মহান’’।
প্রথম জামারা ও দ্বিতীয় জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপের পর দোয়া করেন হাজিরা। কারণ এ সময় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন। এ জায়গাটি হাজিদের দোয়া কবুলের জায়গাগুলোরও একটি।
৩. কোরবানি বা হাদি আদায়
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তামাত্তু ও কিরান হজ আদায়কারীরা যে উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ইত্যাদি পশু বাধ্যতামূলকভাবে জবেহ করে থাকেন তাকে হাদি বলা হয়। অনেকে বলে থাকেন এটা হজের কোরবানি, কিন্তু আসলে হজের ক্ষেত্রে এর নাম হলো হাদি। কোরবানি করা হয় ঈদে, হাদি পাঠানো হয় হজে আর দম দেয়া হয় কাফফারা আদায় করতে।
কোরবানি পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় করা যায়। হাদি শুধুমাত্র হারাম এলাকা তথা মক্কা, মিনা ও মুজদালিফায় করা যায়। আর দম হারামের সীমানার ভেতর আদায় করতে হয়। হাদি ও কোরবানির গোশতো নিজে খাওয়া যায় কিন্তু দমের গোশতো নিজে খাওয়া যায় না। কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা সুন্নত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজে ৬৩টি উট জবাই করেছিলেন।
জবাই করার সময় তিনি পড়তেন,
بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللهم مِنْكَ وَلَكَ، اَللهم تَقَبَّلْ مِنِّي
বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী।
‘আল্লাহর নামে, আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! এ প্রাণী আপনার পক্ষ থেকে এবং এর মালিক আপনি। হে আল্লাহ! আমার এটি আপনি কবুল করুন।’
৪. চুল কাটা
কোরবানি বা হাদি শেষে চুল কেটে ইহরামের কাপড় খুলে ফেলেন হাজিরা। এরপর থেকে ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ হারাম ছিল তার প্রায় সবই হালাল হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
তোমাদের কেউ মাথা মুণ্ডন করবে ও কেউ চুল ছোট করবে।
হাদিসে এসেছে, ‘আর তোমরা মাথা মুণ্ডন কর, এতে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব ও একটি গুনাহের ক্ষমা রয়েছে।
৫. তাওয়াফে যিয়ারা আদায়
হজের সর্বশেষ ফরজ বিধান হলো তাওয়াফে যিয়ারা। একে তাওয়াফে ইফাদাও বলা হয়। ১০ জিলহজ ফজরের সূর্য উদয়ের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এ তাওয়াফ করা যায়। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ তাওয়াফ করে নেওয়াই উত্তম। ইহরাম না থাকায় এ তাওয়াফে রমল করতে হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৭:৩৪ ২১ বার পঠিত