মহাকবি ফেরদৌসী বিশ্বের একমাত্র কবি যিনি একসঙ্গে তিনটি দেশ ইরান, আফগানিস্তান এবং তাজিকিস্তানের জাতীয় কবির সম্মানে ভূষিত। এ ছাড়া পৃথিবীর অনেক কবি জীবদ্দশায় ‘জাতীয় কবি’র সম্মান পেয়েছেন। ইংরেজি সাহিত্যে শেক্সপীয়র কালজয়ী অবদান রেখেছেন, ব্রিটিশরা তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছে। জার্মানের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি পান গ্যেটে। পুশকিন রাশিয়ার জাতীয় কবি।
ফ্রান্সের জাতীয় কবি শার্ল বোদলেয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কবি রবার্ট ফ্রস্ট। উর্দু ভাষার সবচেয়ে শক্তিশালী কবি ইকবালকে পাকিস্তান জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছে।
১৯৭১-এর ১০ এপ্রিলে মুজিবনগরে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে গঠিত হয় ‘প্রবাসী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার’।
বিশ্বের যেসব দেশে পাকিস্তানের দূতাবাস ও হাইকমিশন রয়েছে, সেগুলোতে কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য ঘোঘণা করার আহ্বান জানানো হয়। ১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টায় ভারত হাইকমিশনের ছাদে উঠে হাইকমিশনার পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন এবং পাকিস্তানের জাতির পিতার ছবি সরিয়ে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এবং পাকিস্তানের জাতীয় কবি ড. আল্লামা ইকবালের ছবি সরিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের ছবি টাঙিয়ে দেন।
কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি হিসেবে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। ১৯৭১ সালে ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কলকাতায় জাতীয় মর্যাদায় উদযাপন করে। ২৫ আগস্ট প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা এক জরুরি বৈঠকে নজরুলকে মাসিক ৩৫০ টাকা হিসাবে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধুর বিশেষ উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২৪ মে বেরা ১১টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে চড়ে কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেন কবি। ধানমন্ডিতে তাঁর জন্য নির্ধারিত বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু নিজে বাড়িটি পছন্দ করে এর নাম দিয়েছিলেন ‘কবি ভবন’। সরকারের বরাদ্দ করা সেই বাড়িটি এখন নজরুল ইনস্টিটিউট। তাকে দেখতে গিয়েই কবির জন্য এক হাজার টাকা করে সরকার থেকে মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর পরিবারের বসবাসের জন্য বাড়ি এবং তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেয় সরকার।
১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে কাজী নজরুল ইসলামের যে জন্মজয়ন্তী সরকারিভাবে উদযাপন করা হয়, তা ছিল বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কবির দ্বিতীয় জন্মজয়ন্তী। এরপর ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারিভাবে জাতীয় কবির জন্মদিবস উদযাপন উপলক্ষে ঘোষণা করেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি জাতিসত্তার সর্বশ্রেষ্ঠ রূপকার’।
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে বিশেষ বাণী দিয়েছেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করছে, আজ বিকাল ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হবে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৭:২৫ ১৪ বার পঠিত