নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি সমুদ্র পথে হয়ে থাকে, অর্থমূল্যে যার পরিমাণ ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিবছর চার হাজারের বেশি বাণিজ্য জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরগুলোতে আসছে।
রোববার (১২ মে) রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ আয়োজিত মেরিটাইম এন্টি-করাপশন নেটওয়ার্ক (এমএসিএন) বাংলাদেশ রিপোর্ট লঞ্চ ইভেন্ট এবং মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্যে জালিয়াতি প্রতিরোধ শীর্ষক যৌথ সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই জাতীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। এগুলো সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ব্যবসাবান্ধব সরকারের কারণে। এ সরকারের আমলে বন্দরগুলোর গতিশীলতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাশেকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে রূপকল্প দিয়েছেন তা বাস্তবে রূপ দিতে নৌপরিবহন খাত সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরের উন্নয়নের লক্ষ্যে পায়রা বন্দর স্থাপন করা হয়েছে। মোংলা বন্দরের আউটার বার ও ইনার বারে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়েছে। চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন, গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং অন্যান্য হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। বে-টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ চলমান। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের জন্য বড় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও সুযোগ তৈরি করবে এবং এটিকে একটি আঞ্চলিক সামুদ্রিক কেন্দ্রে পরিণত করবে।
বর্তমান সরকার ব্যবসার পরিবেশকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে নিরলসভাবে চেষ্টা করছে উল্লেখ করে খালিদ মাহমুদ বলেন, বন্দর ও নৌপরিবহন পরিচালনায় ডিজিটালাইজেশনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। কনটেইনারগুলির স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং, বন্দর, এজেন্ট এবং কাস্টমসের মধ্যে শিপিং তথ্যের ডিজিটাল আদান-প্রদান এখন আর নতুন কিছু নয়। এগুলো পোর্ট অপারেশনে ভালো ভূমিকা রাখছে। বিশ্বব্যাপী র্যাঙ্কিংয়ে উচ্চ অবস্থানে পৌঁছাতে কাজ করছে বন্দরগুলো। সামুদ্রিক শিপিং একটি বিশ্বব্যাপী খাত যেখানে স্বচ্ছতা এবং সম্মতির বিষয়গুলো বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত।
নৌখাতে দুর্নীতিরোধকল্পে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মেরিটাইম সেক্টরে দুর্নীতি বন্ধে সম্মিলিত আওয়াজ তোলার লক্ষ্যে মেরিটাইম এন্টি-করাপশন নেটওয়ার্ক (এমএসিএন) গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশে কাজ করছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি উদ্বেগজনক অবস্থায় নেই, তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এবং ব্যবসায়িকদের বৈশ্বিক মান অনুসরণ করার জন্য এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এমএসিএন সামুদ্রিক সেক্টরে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করেছে এবং মূল স্টেকহোল্ডারদের একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে যাতে একটি জোট গড়ে তোলা যায়।
আমরা চাই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ। উন্নত বাংলাদেশ মানে শুধু অর্থবিত্তের মধ্য দিয়ে উন্নত হওয়া নয়, উন্নত বাংলাদেশ হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। উন্নত বাংলাদেশ হচ্ছে একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্বের সুখ সুবিধা আমাদের মধ্যে থাকবে। সেই ধরনের উন্নত বাংলাদেশ চাই, যেখানে সমগ্র পৃথিবী এই বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ববোধ ও অহংকার করবে বলে মন্তব্য করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী, এমএসিএন-এর দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র নেতা জোনাস সোবার্গ আরল্যান্ডসেন, এমএসিএন বাংলাদেশ প্রকল্পের নেতা কমডোর (অব.) সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির এবং ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহামিন জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৮:২৮ ২৩ বার পঠিত