রাশিয়ার হামলা ইউক্রেনকে পেছেনে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের সেনাপ্রধান অলেক্সান্ডার সিরস্কি। টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি রুশ আগ্রাসন মোকাবিলা করছে এবং তার দাবি, রুশ হামলার মুখে ফ্রন্টলাইনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাধিক রুশ হামলার মুখে ফ্রন্টলাইনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ। অলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলের বেশ কয়েকটি অবস্থান থেকেও সরে গেছে।
ইউক্রেনীয় বাহিনী নতুন মার্কিন অস্ত্রের অত্যাবশ্যকীয় সরবরাহ পাওয়ার আগে রাশিয়া জনশক্তি এবং আর্টিলারিতে তার শ্রেষ্ঠত্বের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য গত সপ্তাহে ইউক্রেনকে ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ দিতে সম্মত হয়েছে।
কিন্তু নতুন মার্কিন অস্ত্র এখনও রাশিয়া-ইউক্রেন ফ্রন্টলাইনে পৌঁছায়নি। মূলত ইউক্রেনীয় সৈন্যরা গত কয়েক মাস ধরে গোলাবারুদ, সৈন্য এবং আকাশ প্রতিরক্ষার সংকটকে সাথে নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
রোববার টেলিগ্রাম মেসেজিং সার্ভিসের একটি পোস্টে জেনারেল সিরস্কি বলেছেন, ‘ফ্রন্টলাইন তথা সম্মুখ সমরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।’
তিনি নিশ্চিত করেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী দোনেৎস্কের একটি এলাকায় তাদের কিছু অবস্থান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ যুদ্ধ হচ্ছে চাসিভ ইয়ারকে ঘিরে। এটি এমন একটি কিয়েভ-নিয়ন্ত্রিত দুর্গ যেখানে অবদিভকা দখল করার পরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে রাশিয়া।
এদিকে জেনারেল সিরস্কি অগ্রসরমান রাশিয়ানদের কাছে অঞ্চল হারানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মস্কো ‘কিছু সেক্টরে কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে।’
জেনারেল সিরস্কি আরও বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিটগুলোকে প্রতিস্থাপনের জন্য অন্য ইউক্রেনীয় ব্রিগেডগুলোকেও সেই অঞ্চলগুলোতে আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা আভদিভকা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) উত্তরে নভোবাখমুটিভকা গ্রাম দখল করেছে।
উল্লেখ্য, জেনারেল সিরস্কি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জালুঝনির মধ্যে সম্পর্কে ফাটল দেখা দেওয়ার জল্পনার মধ্যেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
এই মাসের শুরুর দিকে জেনারেল সিরস্কি সতর্ক করে বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি ‘উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ’ হয়েছে।
এছাড়া ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের কমান্ডার ওলেক্সান্ডার পিভনেনকো এই সপ্তাহে বলেছেন, তিনি রাশিয়ান সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের খারকিভ শহরের দিকে রাশিয়ান বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার চেষ্টার প্রত্যাশা করছেন। এই শহরটি রুশ সীমান্তের পাশেই অবস্থিত।
কয়েক মাস ধরে চলা অচলাবস্থার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে কংগ্রেসের কিছু লোকের বিরোধিতার মধ্যেই ইউক্রেন, ইসরায়েল এবং তাইওয়ানের জন্য ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা প্যাকেজে স্বাক্ষর করেছেন।
সর্বশেষ সহায়তা পাসের পর গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসাবে তারা ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স মিসাইল এবং আর্টিলারি গোলাবারুদ দ্রুত পাঠাবে।
জার্মান গবেষণা সংস্থা কিয়েল ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৫:৫৭ ১৭ বার পঠিত