বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মতো ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায়ও পালিত হচ্ছে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে সেখানে বাকি বিশ্বের মতো নেই ঈদের আনন্দ। ইসরায়েলি বোমা আতঙ্ক, অনাহার এবং প্রিয়জন হারানোর বেদনা নিয়েই ঈদের দিনটি পার করছেন গাজাবাসী।
মসজিদে ঈদের নামাজের মাধ্যমে মুসলিমদের ঈদের দিনটি শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। তবে গাজার বেশির ভাগ মসজিদই ইসরায়েলি বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। ফলে মসজিদের ধ্বংসাবশেষে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
বুধবার গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের আল-ফারুক মসজিদের ধ্বংসাবশেষে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের ছবি প্রকাশ করেছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
অন্যদিকে বিগত বছরের তুলনায় এবার আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শুধুমাত্র ৬০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের অনুমতি দেওয়া হয়।
রাফাহর একজন বাসিন্দা আহমেদ ইসমাইল আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘পবিত্র অনুষ্ঠানগুলো উদযাপন করার জন্য কোনও আনন্দ বা ক্ষুধা নেই। এমনকি বাচ্চাদেরও খেলনার প্রতি কোন আগ্রহ নেই যেমন তারা অতীতে ছিল। এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ ঈদ।’
জাবর হাসান নামে আরেক একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আর ঈদ উদযাপন বা অন্য কোনো আনন্দের কথা ভাবি না।’
এদিকে ঈদের দিনও রাফার আকাশে ইসরায়েলি সামরিক ড্রোনগুলোকে টহল দিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
এরআগে মঙ্গলবার রাতে, যখন ফিলিস্তিনিরা ঈদের আগমনে আনন্দ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বেশ কয়েকটি আবাসিক বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
সর্বশেষ হামলার মধ্যে একটিতে কমপক্ষে ১৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে সেই হামলায় একটি পরিবারের শিশু ও নারীসহ সবাই মারা গেছে।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার বলেছেন- গাজা, সুদান এবং অন্যান্য স্থানের অনেক মুসলমান সংঘাতের কারণে রমজান মাস শেষে ঈদুল ফিতরের ছুটি উদযাপন করতে পারবে না জেনে তার হৃদয় ‘ভেঙে’ গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে-এ এক ঈদ বার্তায় গুতেরেস বলেছেন ‘প্রতি বছর, আমি সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কে ঈদুল ফিতরের জন্য আমার শুভেচ্ছা জানাই, তবে এ বছর আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। কারণ গাজা, সুদান এবং অন্যান্য অনেক জায়গায় — সংঘাত ও ক্ষুধার কারণে — অনেক মুসলিম সঠিকভাবে উদযাপন করতে পারবে না।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
প্রায় ছয় মাস ধরে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
অন্যদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল, এতে তীব্র জ্বালানি সংকটে দেখা দেয়। জ্বালানির অভাবে উপত্যকার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা এবং উপত্যকার পানি ব্যবস্থাপনা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
এছাড়াও ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও ৭৬ হাজার আহতের পাশাপাশি প্রায় ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা, আনাদোলু
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৯:৪২ ২২ বার পঠিত