যুদ্ধ করতে চান না মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। পালিয়ে দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে তাদের মধ্যে। জান্তা সরকারের হয়ে বেসামরিক নাগরিকদের দমন-পীড়ন করা থেকে বিরত থাকতেই পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একাধিক সাবেক সেনা সদস্যের কথা থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ায় এবং সেনাবাহিনীতে তরুণদের অনাগ্রহ থাকার কারণে সেনা সংকট দেখা দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতে।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন মিয়ানমারের তরুণ প্রজন্মের একাংশ। ভেবেছিলেন দেশ সেবায় নিয়োজিত হয়ে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবেন। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট পুরো উল্টো। ২০২১ সালে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে জান্তা সরকার। এরপরই শুরু হয় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর দমন-পীড়ন। আর এ কাজে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেনা সদস্যদের।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক সদস্যকে জান্তা সরকারের হয়ে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাতে হয়। নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করতে হয়। জ্বালিয়ে দিতে হয় গ্রামের পর গ্রাম। সম্প্রতি জান্তা সরকারের হয়ে এসব কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখতে সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
জান্তাবিরোধী রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যের সরকার বা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট অব মিয়ানমারের (এনইউজি) বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি সেনা ও পুলিশ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সদস্য বিবিসিকে জানান, সাধারণ মানুষ তাদের নিষ্ঠুরতা ও অন্যায় কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা করে। এমনকি ‘মিলিটারি ডগ’ বা ‘সামরিক কুত্তা’ বলেও বলেও গালি দেয়া হয় তাদের। যা একজন সেনার জন্য চরম অপমানের।
সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে ধরাও পড়েছেন। পরে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে তাদের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। তারপরও অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, এভাবে পালিয়ে যাওয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে দেখা দিয়েছে সেনা সংকট। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না সাধারণ নাগরিকরা। অর্থের প্রলোভন দেখিয়েও নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না সেনাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৮:২৬ ৩৯ বার পঠিত