তেলসমৃদ্ধ কাতার আগামীকাল বাংলাদেশের সাথে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইউক্রেন সংকটের কারণে গত এক বছর ধরে এর দাম বাড়ার ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য অপেক্ষা করছে। কর্মকর্তারা আজ এখানে একথা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বাসসকে বলেন, “আগামীকাল দোহায় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটা স্পষ্টতই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কাতার সফরের ফলাফল।”
তিনি আরও বলেন, কাতার এনার্জি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সাথে একটি দীর্ঘমেয়াদী তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষর করবে যা কাতারের নর্থ ফিল্ড সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য দ্বিতীয় এশিয়ান বিক্রয় চুক্তি হবে।
পেট্রোবাংলার আরেক কর্মকর্তা জানান, ১৫ বছরের চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ কাতার থেকে বছরে ২০ লাখ টন এলএনজি পাবে। কাতার বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি রপ্তানিকারক দেশ।
তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, ঢাকা গত কয়েক মাস ধরে কাতারের সঙ্গে একটি চুক্তির চেষ্টা করছিল। প্রধানমন্ত্রীর গত সপ্তাহের কাতার সফরের সময় এটি অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল।
চৌধুরী বলেন, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, যিনি এলএনজি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আগামীকাল চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজ দোহা যাচ্ছেন।
২৩-২৫ মে দোহা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমিরি দেওয়ানে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে বৈঠক করেন।
কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে কাতার থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়ে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা চলছিল।
প্রস্তাবিত চুক্তিটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। রয়টার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যখন এলএনজির জন্য প্রতিযোগিতা বেড়েছে তখন বাংলাদেশ-কাতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে চলেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে এমন একটি সময়ে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হচ্ছে যখন বিশেষ করে ইউরোপকে গ্যাস দিতে রাশিয়ান পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, এই গ্যাস মহাদেশের আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ।
এদিকে, এশিয়া, দীর্ঘমেয়াদী ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির জন্য অপেক্ষায় থাকাকালে কাতারের বিশাল উৎপাদন সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে গ্যাস পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, কাতারের সাথে প্রথম ১৫ বছরের চুক্তির অধীনে, বাংলাদেশ ব্রেন্ট তেলের তিন মাসের গড় মূল্যের ১২.৬৫ শতাংশ এবং প্রতি এমএমবিটিইউতে ৫০ সেন্ট পরিশোধ করবে।
নর্থ ফিল্ড সম্প্রসারণ প্রকল্প বিশ্বব্যাপী গ্যাসের দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। নর্থ ফিল্ড হল বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রের অংশ যা কাতার ইরানের সাথে শেয়ার করে, যাকে তারা দক্ষিণ পার্স বলে অভিহিত করে।
দুই-পর্যায়ের সম্প্রসারণ পরিকল্পনাটি ২০২৭ সাল নাগাদ কাতারের তরলীকরণ ক্ষমতা প্রতি বছর বাড়িয়ে ৭৭ মিলিয়ন থেকে ১২৬ মিলিয়ন টন করবে। রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের সিনোপেকের সাথে কাতারের প্রথম এশিয়ান চুক্তি অনুযায়ী বছরে ৪ মিলিয়ন টন সরবরাহ করা হবে যা ২৭ বছরের মধ্যে স্বাক্ষরিত সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৯:৩৬ ৪৭ বার পঠিত