স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদকে শেষ ষোলর প্রথম লেগে ২-০ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পথে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেই(পিএসজি)। ম্যাচের প্রথম গোলটি করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
পার্ক ডি প্রিন্সেসে পিএসজির জন্য প্রথমার্ধটা ছিল মাঝারি মানের। এ কারনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে সমর্থকদের সামনে আরো একবার হতাশার গল্প প্রায় এসেই গিয়েছিল। কিন্তু মৌসুমের শেষে চুক্তি শেষ হয়ে গেলে ক্লাব ছাড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া তারকা স্ট্রাইকার এমবাপ্পে ৫৮ মিনিটে ডেডলক ভাঙ্গেন। এরপর নড়েচড়ে বসে পিএসজি। ব্যবধান বাড়ানোর তাগিদে একের পর এক আক্রমন চালাতে থাকে। ৭০ মিনিটে সফলও হয়। ব্র্যাডলি কারকোলার গোলের ব্যবধান দ্বিগুন করে স্বাগতিকরা। আাগামী মাসে স্পেনে খেলতে যাবার আগে ঘরের মাঠের এই দুই গোল নি:সন্দেহে পিএসজিকে আত্মবিশ^াস যোগাবে।
ক্যানাল প্লাসকে এমবাপ্পে বলেছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমরা গোল করতে সমর্থ হয়েছি। প্রথম ধাপে এই জয়ে আমরা দারুন খুশী। এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। কিন্তু তারপরও এখানকার জয় পরের ম্যাচে কাজে আসবে।’
অধিানয়ক মারকুইনহোস বলেন ‘প্রথমার্ধে আমরা কঠিন সময় পার করেছি। কিন্তু এমনটা হবে আমরা আগে থেকেই অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। বিরতির সময় কোচ আমাদের উজ্জীবিত করেছেন। আমি মনে করি সেটাই এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের মানসিকতা বেশ ইতিবাচক ছিল। আমরা জানি ঘরের মাঠে জয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি। এই একই মানসিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। লিগে ভাল খেলতে হবে এবং এরপর স্পেনে গিয়ে আসল কাজটা সাড়তে হবে।’
গত সার আসরের পাঁচটিতেই শেষ ষোল থেকে বিদায় নেয়া পিএসজি এবার অন্তত আর ভক্তদের হতাশ করতে চাননা। যে কারনে বেশ চাপের মধ্যে থেকেই স্পেন সফরে যাবে প্যারিসের জায়ান্টরা। আরো একটি বিদায় কাতারের মালিকানাধীন ক্লাবটি আর নিতে নিতে পারবে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। বিশেষ করে প্রায় দুই দশক পর প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বে খেলতে আসা সোসিয়েদাদও ছেড়ে কথা বলবে না।
সব ধরনের প্রতিযোগিতা শেষ চার ম্যাচের একটিতেও জয়ী হতে পারেনি সোসিয়েসাদ। তার উপর ইনজুরির কারনে দলে ছিলেন না অধিনায়ক ও শীর্ষ গোলদাতা মিকেল ওয়ারজাবাল। ২০ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান লেফট-ব্যাক লুকাস বেরালডোকে কাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অভিষেকের সুযোগ করে দিয়েছে পিএসজি। জানুয়ারিতে বেরালডো পিএসজিতে এসেছেন। নভেম্বরের পর থেকে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় টানা ১৬ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছ পিএসজি।
প্রথমার্ধের শুরুতে এমবাপ্পের একটি শট রুখে দিয়েছিলেন সোসিয়েদাদ গোলরক্ষক এ্যালেক্স রেমিরো। প্রথমার্ধে এই একটি সুযোগ ছাড়া আর সোসিয়েদাদের আর কোন পরীক্ষা নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। বিপরীতে গ্রুপ পর্বে ইন্টার মিলানকে বিদায় করে দিয়ে নক আউট পর্বে আসা সোসিয়েদাদকে বেশী সাচ্ছন্দ্য মনে হয়েছে। বিরতির আগে তাদের সামনে এগিয়ে যাবার সুযোগও এসেছিল। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে অধিনায়ক মিকেল মেরিনো বলের নিয়ন্ত্রন নিয়ে ২৫ মিটার দুরে থেকে শট নিলেও অল্পের জন্য তা বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
৫৮ মিনিটে ওসমানে ডেম্বেলের কর্ণার থেকে মারকুইনহোসের সহায়তায় এমবাপ্পে শেষ পর্যন্ত ডেডলক ভাঙ্গেন। এবারের মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় এটি ফরাসি অধিানয়কের ৩১তম ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চতুর্থ গোল। মৌসুম শেষে রিয়াল মাদ্রিদে এমবাপ্পের যাবার জোড় গুঞ্জন রয়েছে। এক গোলে এগিয়ে থেকে পিএসজিক বেশ ফুরফুরে মেজাজে খেলতে দেখা গেছে। ৬৩ মিনিটে এমবাপ্পে নিজের দ্বিতীয় গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু তার শক্তিশালী শট রেমিরোর মাথার উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ম্যাচ শেষের ২০ মিনিট আগে বাম দিক থেকে বল সংগ্রহ করে রেমিরোকে পরাস্ত করতে কোন ভুল করেননি বারকোরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটাই তার প্রথম গোল। দুই গোলে পিছিয়ে পড়া লি রিয়ালরা আর ম্যাচে ফিরে আসার পথ খুঁজে পায়নি। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ ম্যাচে তারা গোল বিহীন থাকলো।
আগামী ৫ মার্চ সান সেবাস্টিয়ানে তারা পিএসজিকে ফিরতি লেগে আতিথ্য দিবে সোসিয়েদাদ । কিছুটা হলেও নিজেদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য এর থেকে ভাল সুযোগ আর হতে পারেনা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই পর্যায়ে পিএসজির যা পরিসংখ্যান তাতে কিছুটা হলেও আত্মবিশ^াসী হতে পারে সোসিয়েদাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৪:১৮ ২০ বার পঠিত