মাথা নেড়া, চোখে মোটা চশমা, পরনে কঠিন চিবর, গেরুয়া বসন, পায়ে চটি! এ যেন এক সাক্ষাৎ ধর্মদূত! তাকে কি সন্দেহ করা যায়? পৌরহিত্য আর পোশাকের বদৌলতে তিনি বারবার থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে এবার ধরা পড়েছেন গোয়েন্দা জালে। বলছি, ডিপু চাকমা নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর কথা। যিনি দুই সহযোগীসহ ১৬ হাজার ইয়াবা নিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন রাজধানী থেকে। একজন ধর্মগুরু কীভাবে হয়ে গেলেন ইয়াবা পরিবহনকারী?
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার আদর্শ বৌদ্ধবিহারের প্রধান ভিক্ষু ডিপু চাকমা। বাবার স্বপ্ন ছিল ডিপু একজন প্রথিতযশা বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে লোভ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেবেন। আলোকিত মানুষ হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষের অন্ধকারে ধৈর্য ও সহনশীলতার আলো ছড়াবেন সমাজে। সেই পথে অগ্রসরও হয়েছিলেন বহুদূর। পালি শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্য তার।
দেশে এবং দেশের বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শাস্ত্রীয় জ্ঞানে নিয়েছেন তালিম। দেশের কয়েকটি বৌদ্ধবিহারের প্রধান ভিক্ষুর দায়িত্বও পালন করেছেন। হঠাৎই সবকিছুর ছন্দপতন।
মোবাইল ব্রাউজিং করতে করতে এক সময় পরিচিত হন অনলাইন জুয়ার সঙ্গে। সেখান থেকেই জুয়ায় আসক্ত হয়ে এরই মধ্যে হারিয়েছেন প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এ টাকার মধ্যে ছিল নিজের বেতন, দান-দক্ষিণা, মৃত বাবার ভিটেমাটি বিক্রয়লব্ধ টাকা এবং মায়ের ধার করে নেয়া এনজিওর টাকা।
অনলাইন জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন ইয়াবা পরিবহনের কাজে নিজেকে সঁপে দেয়ার। হার মানেন নগদ টাকার হাতছানির কাছে। তার ধর্মগুরু আপেল বড়ুয়ার হাত ধরে প্রবেশ করেন ইয়াবার জগতে। নিয়মিত কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা থেকে হাজার হাজার পিস ইয়াবা বহন করে ঢাকায় আনতেন। মঙ্গলবার রাতে ১৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়েন গোয়েন্দা জালে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, তার এই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর চলন-বলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শুরুর দিকে সন্দেহ হয়নি। এই সুযোগে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে একের পর এক চালান নিয়ে এসেছেন ঢাকায়। একপর্যায়ে সব তথ্যপ্রমাণে নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এখন ডিপু চাকমার সঙ্গে থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ বাংলাদেশের কোন কোন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সম্পর্ক আছে তার খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৬:০৭ ২০ বার পঠিত