নিজস্ব প্রতিবেদক : হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভস অফ জাপানের স্পিকার হিরোইউকি হসোদা-র সাথে আজ জাপানের পার্লামেন্ট (ডায়েট)-এ অবস্থিত স্পিকার্স কনফারেন্স কক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাতকালে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জাপান সফর, জাপান বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর, বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালীকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত স্থাপন করেন, যা ইতোমধ্যে পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জাপান সফর জাপান-বাংলাদেশ পঞ্চাশ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের অনন্য মাইলফলক। এসময়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং তথ্য-প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাপানকে অধিকতর বিনিয়োগের আহ্বান জানান স্পীকার।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ‘ডব্লিউ ও ডব্লিউ কনফারেন্স’-এ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি-র জাপান সফর স্মরণ করে হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভস অফ জাপানের স্পিকার হিরোইউকি হসোদা বলেন, জাপান বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগামী দিনে আরো জোরদার হবে। এধরণের সংসদীয় সফর বিনিময় দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করবে।
সাক্ষাত শেষে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদল জাপানের পার্লামেন্ট পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভস অফ জাপানের স্পিকার হিরোইউকি হসোদা স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী-কে জাপানের সংসদীয় কার্যক্রমের সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করেন।
অত:পর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি-র সাথে টোকিওস্থ হোটেল ক্যাপিটলে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ লীগের প্রেসিডেন্ট আসো তারো সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতকালে স্পীকার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পর থেকেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পানি ব্যবস্থাপনা, সেনিটেশন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ ও সংস্কার ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাপান বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে। জাপান বর্তমানে বাংলাদেশের একক বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার। কোভিড মহামারিকালীন ভ্যাক্সিন প্রদানের মাধ্যমে জাপান বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি অর্জনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যার তরুণ জনসমষ্টি অত্যন্ত দক্ষ। তাদের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে জাপানের অধিকতর বিনিয়োগ কামনা করেন স্পীকার।
এরপর, হাউজ অফ কাউন্সিলরস অফ জাপানের প্রেসিডেন্ট হিদেহিসা ওতসুজি-র সাথে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতকালে স্পীকার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিসমূহের বাস্তবায়ন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, ল্যাকটেটিং মায়েদের ভাতা প্রদান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জাপান অধিক বিনিয়োগ করতে পারে। লিঙ্গ বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুদেশ একসাথে কাজ করতে পারে। এসময়, দুদেশের সংসদীয় সম্পর্ক আরো জোরদারকরণে গুরুত্বারোপ করেন স্পীকার।
প্রথম নারী স্পীকার হিসেবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট হিদেহিসা ওতসুজি বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জাপান সফরের মাধ্যমে দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়েছে।
হাউজ অফ কাউন্সিলরসের প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতের পূর্বে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাপানের পার্লামেন্টের অধিবেশন পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় সকল সংসদ সদস্যগণের সাথে স্পীকারকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় এবং সংসদ সদস্যগণ করতালির মাধ্যমে স্পীকারকে অঅভ্যর্থনা জানান।
সবশেষে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভস অফ জাপানের স্পিকার হিরোইউকি হসোদা-র আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন।
সাক্ষাতকালে ইবায়াসি তাতসুনোরি এমপি, কাজিয়ামা হিরোসি এমপি, সুকাডা ইসিরো এমপি, মাকিসিমা কেরেন এমপি, ইয়ামামোতো হিরোনরি এমপি, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ, আ ফ ম রুহুল হক এমপি, আবুল কালাম মো: আহসানুল হক চৌধুরী এমপি, বদরুদ্দোজা মো: ফরহাদ হোসেন এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার এমপি ও কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, অতিরিক্ত সচিব মো: নূরুজ্জামান, স্পীকারের একান্ত সচিব অতিরিক্ত সচিব এম এ কামাল বিল্লাহ, যুগ্মসচিব মো: তারিক মাহমুদ এবং স্পীকারের সহকারী একান্ত সচিব উপসচিব মো: রাশেদ ইকবাল চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৬:১২ ৮২ বার পঠিত