রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪

বিপর্যয়ের মুখে তৈরি পোশাক খাত

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » বিপর্যয়ের মুখে তৈরি পোশাক খাত
রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪



বিপর্যয়ের মুখে তৈরি পোশাক খাত

লোহিত সাগরসহ আশপাশের অঞ্চল যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প। ইউরোপ আমেরিকাগামী পণ্যবাহী জাহাজগুলোর বিকল্প পথের বাড়তি ১৫ দিন সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে কেটে নেয়ায় গার্মেন্টস কারখানাগুলোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে কনটেইনার প্রতি ১ হাজার ৫০০ ডলার করে বেড়ে যাওয়া ভাড়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলো।

এক মাসের বেশি সময় ধরে লোহিত সাগর কেন্দ্র করে ইরানপন্থী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সরাসরি সংঘাত চলছে। এরই অংশ হিসেবে লোহিত সাগর দিয়ে চলাচলরত ইহুদী মালিকানাধীন পণ্যবাহী জাহাজে যেমন হুতিরা আক্রমণ করছে। তেমনি হুতি আস্তানাগুলোতেও সমানতালে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল যৌথ শক্তি। এ অবস্থায় লোহিত সাগরসহ আশপাশের পুরো এলাকায় যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজ চলাচল এক প্রকার বন্ধ রাখা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, ‘এ বন্দরে যখনই কোনো জাহাজ আসে, আমরা চেষ্টা করি সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে এটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কাজ সম্পন্ন করার, যাতে জাহাজটির সময় বাঁচে। যেন জাহাজটি সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে পৌঁছাতে পারে। তারপরও সার্বিকভাবে এর নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় নিরাপত্তা বিভাগ রয়েছে। তারা সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।’

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এস আবু তৈয়ব বলেন,

লোহিত সাগরের বর্তমান পরিস্থিতি পুরো ব্যবসার ওপর; পুরো রফতানি বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে আমরা সময় স্বল্পতায় ভুগছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সমস্যা আমাদের জন্য বড় ধরনের একটি আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

এদিকে ইউরোপ-আমেরিকাগামী পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে সংঘাতপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে বিকল্প পথেই চলতে হচ্ছে। ফলে সাড়ে তিন হাজার নটিক্যাল মাইল বাড়তি যাত্রাপথের কারণে জাহাজগুলোর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে ১৫ থেকে ২০ দিন বাড়তি সময় লাগছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি শীর্ষস্থানীয় শিপিং লাইন বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার ভাড়া ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।

ভাড়া বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এম এস সি বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অব অপারেশন মো. আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, বিকল্প পথ ব্যবহার করে একটি জাহাজের পুরো যাত্রা সম্পন্ন করতে বাড়তি ২ মিলিয়ন ডলার জ্বালানি বাবদ ব্যয় হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য পরিচালন ব্যয় তো আছেই। তাই ব্যয় মেটাতে জাহাজগুলো অব্যাহতভাবে তাদের ভাড়া বাড়াচ্ছে।

ক্রমাগত জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জি বি এক্স লজিষ্টিক লিমিটেডের হেড অব অপারেশন মুনতাসির রুবায়েত বলেন, এটির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। আমাদের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা কন্ট্রিবিউশন মার্জিন বা রেট নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে অনেক দুর্বল হয়ে যাবে।

লোহিত সাগর এড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পৌঁছাতে বাড়তি সময় লাগায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতেও নানামুখী জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য বলছে, বাংলাদেশের ৪ হাজারের বেশি কারখানায় বছরে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদিত হয়। যার ৬৫ শতাংশ পাঠানো হয় ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয় লোহিত সাগরের সমুদ্ররুট। কিন্তু লোহিত সাগরে যুদ্ধাবস্থার কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প।

বিশ্ববাজারের চারটি পোশাক মৌসুমে কারখানা পর্যায়ে ডিজাইন প্ল্যানিং থেকে শুরু করে শোরুমে পৌঁছাতে সময় লাগত অন্তত আড়াই মাস। কিন্তু এখন যাত্রাপথের ১৫ দিনের লিড টাইম কমিয়ে দিয়েছে বায়ার প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিপমেন্টের জন্য এক মাসও সময় পাচ্ছেন না গার্মেন্টস মালিকরা।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন,

সামনের মৌসুমগুলোতে আমরা ১৫ দিন আগেই প্রতিযোগিতার মুখে চলে আসছি। এখন যাত্রাপথের জন্য আমাদের লিড টাইম ১৫ দিন কমিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা সামনের মৌসুমের জন্য ক্রয়াদেশ কম পাচ্ছি।

শিপিং লাইনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল যেমন ৬৪ শতাংশ কমে গেছে, তেমনি বিকল্প পথ আফ্রিকার ক্যাপ অব গুড হোপ রুট দিয়ে জাহাজ চলাচল বেড়েছে অন্তত ১৬৮ শতাংশ। এতে জাহাজ প্রতি জ্বালানি তেলের ব্যবহার বেড়েছে দেড়শ মেট্রিক টনের বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৭:৪৪   ৪০ বার পঠিত