রংপুরে মাওলানা কেরামত আলী (রহ.) জৈনপুরীর মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন রংপুর-৩ (সদর ও সিটি কর্পোরেশন) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর কাচারী বাজার সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী কেরামতিয়া জামে মসজিদ চত্বরে মাজার জিয়ারত করেন তিনি।
এর আগে তিনি পল্লীনিবাসে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এবং মুন্সিপাড়া কবরস্থানে শায়িত তার মা-বাবার করব জিয়ারত করেন। পরে নগরীর সেন্ট্রাল রোডে দলীয় কার্যালয়ে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত নির্বাচনী কর্মীসভায় অংশ নেন জিএম কাদের। সেখানে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ঘোষণা দেন।
দলীয় নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে জিএম কাদের বলেন, রংপুর আমার প্রাণের শহর। এখানে আমার শিশুকাল, শৈশবকাল, যৌবনকাল এবং জীবনের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে। এই শহরের কথা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। রংপুরবাসীর কথা কোনোদিন আমি মন থেকে দূরে রাখতে পারিনি। আমি অনেক জায়গায় গেছি, সারা দেশের মানুষ আপনাদের দোয়ায় এখন আমাকে চিনে জানে। অনেকে আমার কাছে আসে এবং আমাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও করে। বিদেশের মানুষের কাছেও আমার পরিচিতি আছে। তারা আমার মতামত নেন, কথা বলেন এবং উপদেশও দেন। তারপরও আমার মন পড়ে থাকে রংপুরে।
তিনি আরও বলেন, আমার মৃত্যুর পর আমার কবর রংপুরে হবে। আমার মা-বাবার কবরের পাশে আমাকে কবরস্থ করতে আমি পরিবারের সবাইকে বলেছি। আমার কবরের জায়গাও কিনে রেখেছি। আমি আপনাদের সন্তান। আপনাদের মাঝেই থাকব, সবসময় থাকব এবং মৃত্যুর পরও থাকব। আমার মৃত্যু যেখানেই হোক আপনারা আমাকে রংপুরে কবরস্থ করার ব্যবস্থা করবেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমি আপনাদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব। সামনের দিনে আপনাদের অধিকার আদায়ের জন্য ভূমিকা রাখব। আপনাদের যেকোনো সমস্যার বিষয়ে যখন যেটা বলবেন আমি আপনাদের পাশে থাকব। আমি আপনাদের জন্য কাজ করব। আমিসহ আমাদের পুরো পরিবার রংপুরবাসীর কাছে চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। আমাদের চরম বিপদের সময় আপনারা পাশে ছিলেন।
রংপুরের মানুষ লাঙ্গল প্রিয় উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, চিরজীবন আমার পিঠের চামড়া দিয়েও আপনাদের ঋণ শোধ করতে পারব না। আপনারা আমার ভাই এবং আমাদের পরিবারের জন্য যা করেছেন তা আজীবন মনে থাকবে। জেলে থেকে এরশাদ সাহেব নির্বাচন করেছেন, আর আপনারা তাকে ভোট দিয়ে পাঁচটি আসনে নির্বাচিত করেছেন। এটা তো ইতিহাসের নজির।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে এরশাদ সাহেবকে বিভিন্ন ভাবে ভোটের বাইরে রাখা হয়েছিল। তখন আমি রংপুর এবং লালমনিরহাট থেকে নির্বাচন করেছিলাম। আমি রংপুরে মাত্র তিন দিন নির্বাচনের প্রচারণায় সময় দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনারা আমাকে ঠিকই বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিলেন। আমি সেইবার লালমনিরহাটে পরাজিত হয়েছিলাম। রংপুরের মানুষের কাছে আমার ঋণ শোধ করার কোনো উপায় নেই। আমার রক্ত দিয়ে হলেও এই ঋণ শোধ করা সম্ভব হবে না। আমার জীবন দিয়ে হলেও আমি আপনাদের পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ্।
এ সময় তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগর ও জেলা সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, জেলার সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও মহানগরের সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন, সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সদস্য শাফিউল ইসলাম শাফী, জেলা যুব সংহতি সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (লাঙল) ছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক (ডাব), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সহিদুল ইসলাম (মশাল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম (আম) এবং তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী (ঈগল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রংপুর সদর ও সিটি কর্পোরেশনের ৯ থেকে ৩৩নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৪ জন ও পুরুষ ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে দুইজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৭:৫৪ ৬৯ বার পঠিত