এক ম্যাচ হাতে রেখে ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিল নিউজিল্যান্ড। ঘরের মাটিতে বাংলাদেশকে লড়াই করার কোনো সুযোগই দেয়নি ব্ল্যাকক্যাপসরা। দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টাইগাররা বড় সংগ্রহ পেলেও কিউইদের সেটি টপকে যেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। মূলত বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিং স্বাগতিকদের জয়ের পথকে সহজ করে দিয়েছে।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে টাইগাররা। ম্যাচটিতে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ৪৯.৫ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে টাইগার বাহিনী করে ২৯১ রান। জবাবে ৪৬.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
এ দিন নেলসনে ১২ বলে ব্যক্তিগত ২ রানে আউট হন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। অ্যাডাম মিলনের ওভারে বলে খোঁচা মারেন তিনি। স্লিপে তার ক্যাচ নেন কিউই অধিনায়ক টম লাথাম। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৩ রান করেছিলেন তিনি। বিজয়ের পর ভুল শট খেলে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। জ্যাকব ডাফির ওভারে লিডিং এজ হয়ে তিনি ক্যাচ দেন হেনরি নিকোলসকে। ৯ বলে ৬ রান করেন এ ব্যাটার।
লিটনও ফিরে যান পাওয়ার প্লের মধ্যেই। দশম ওভারের চতুর্থ বলে আউট হন এ ব্যাটার। ১১ বলে ৬ রান করেন তিনি। এরপর সৌম্য ও তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে রানের চাকা ঘুরছিল বাংলাদেশের। দুজনে মিলে গড়েছিলেন ৩৪ রানের জুটিও। কিন্তু সৌম্য ক্লার্কসনের একটি বল খেলেন সোজা স্টাম্প বরাবর, হৃদয় ছিলেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তের লাইন থেকে একটু দূরে, ক্লার্কসন বলে শরীর লাগিয়ে দিলে রানআউট হতে হয় তাকে।
উইকেটের মিছিলেই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য। ৫৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সে সময়ে জস ক্লার্কসনের বলে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন রাচিন রবীন্দ্র। একই ওভারে বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার, রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান সৌম্য। সৌম্যকে দারুণ একটি জুটি গড়ে সঙ্গ দেন মুশফিকুর রহিম। দুজনে মিলে গড়েন ৯১ রানের জুটি। এরপর হাফসেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে আউট হন বাংলাদেশ কিপার। ৫৭ বলে ৫টি চারের মার খেলেন তিনি।
মুশফিকের পরে সৌম্যের সঙ্গে জুটি গড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনে ৫৩ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন। ব্যক্তিগত ১৯ রান করে মিরাজ আউট হলেও একপ্র্রান্ত আগলে রাখেন ওপেনার সৌম্য। শেষদিকে তানজিম হাসান সাকিব (১১ বলে ১৩ রান) ও রিশাদ হোসেনের সঙ্গে জুটি গড়েন সৌম্য। তবে ইনিংস শেষ করে যেতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ১৬৯ রান করে আউট হন। সবমিলিয়ে ৫০ ওভার থেকে ১ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ পায় ২৯১ রানের সংগ্রহ।
২৯২ রানের জবাবে নেমে প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে কিউইরা করে ৬১ রান। এরপরে আরও চড়াও হতে থাকেন ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং। তবে ১১তম ওভারের শেষ বলে হাফ সেঞ্চুরির আগে রাচিনকে সাজঘরে পাঠান হাসান। ৩৩ বলে ৪৫ রান করে রিশাদ হোসেনের হাতে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন রাচিন।
রাচিনের পরে উইকেটে আসেন হেনরি নিকোলস। তাকে সঙ্গে নিয়ে ইয়াং রানের খাতা এগিয়ে নেন। ১৭তম ওভারে দলীয় শতক পার করে নিউজিল্যান্ড। ওই ওভারেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কিউই ওপেনার ইয়াং। সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া ইয়াং অবশ্য ৮৪ রানে আউট হয়েছিলেন। তবে রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান।
কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি কিউই ওপেনারের। তাকে সেঞ্চুরির আগেই মাঠ ছাড়তে হয়। ব্যক্তিগত ৮৯ রান করে ৩২.৫ ওভারে হাসান মাহমুদের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইয়াং। ৮টি চার ও ২টি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল তার ইনিংস। এরপরে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে ফেরেন নিকোলস। তিনি ৯৯ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৯৫ রান করে আউট হন। ৪০.৪ ওভারে শরিফুলের বলে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন নিকোলস।
এরপরে অবশ্য জয় তুলে নিতে বেগ পেতে হয়নি নিউজিল্যান্ডের। শেষ দিকে টম ব্লান্ডেল ও অধিনায়ক টম লাথাম মিলে দলের জয় নিশ্চিত করেন। দুজনের জুটি থেকে আসে ৩৬ রান। এ দিকে বাংলাদেশের বোলাররা এ দিন কাজের কাজ করতে পারেননি। হাসান দুটি উইকেট পেলেও সেটি ম্যাচে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তুলনামূলক ভালো বল করে উইকেটশূন্য ছিলেন মিরাজ। আর অভিষিক্ত রিশাদও ছিলেন নিষ্প্রভ। ৫৬টি বল করে এই লেগস্পিনার দিয়েছেন ৬২ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৯.১ ওভারে ২৯১/১০ (সৌম্য ১৬৯, বিজয় ২, শান্ত ৬, লিটন ৬, হৃদয় ১২, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ১৯, তানজিম সাকিব ১৩, রিশাদ ৬, শরিফুল ১* ও হাসান ০ ; অ্যাডাম ১০-০-৭৪-১, জ্যাকব ১০-০-৫১-৩, উইলিয়াম ৯.৫-০-৪৭-৩, ক্লার্কসন ৬-০-৩০-১, আদিথ্য ১০-১-৬৩-১ ও রাচিন ৪-০-১৯-০)।
নিউজিল্যান্ড: ৪৬.২ ওভারে ২৯৬/৩ (ইয়াং ৮৯, রাচিন ৪৫, নিকোলস ৯৫, লাথাম ৩৪*, ব্লান্ডেল ২৪* ; শরিফুল ৯-১-৪৯-১, হাসান ৭-০-৫৭-২, তানজিম সাকিব ৬-০-৫১-০, মিরাজ ১০-১-৪৫-০, রিশাদ ৯.২-০-৬২-০ ও শান্ত ৫-০-৩০-০)।
ফল: ৭ উইকেটে নিউজিল্যান্ড জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সৌম্য সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০০:৩৪ ৩৬ বার পঠিত