প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর পালন করা হয় বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। সেই হিসেবে আজ মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হবে।
মৃত্তিকা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাটি ও পানি : জীবনের উৎস’। দিবসটিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে কৃষিবান্ধব সরকার বহুমুখী কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এর সুফল হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি খাতে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ লক্ষ্য অর্জনে মাটি ও পানিসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে কৃষি খাতে সাফল্যের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সবাইকে সচেষ্ট হবেন- এ প্রত্যাশা করছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মাটি ও পানি দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ যা ছাড়া জীবন, জীবিকা ও সভ্যতা টিকে থাকা অসম্ভব। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি মূলত কৃষিকেন্দ্রিক। অপরিকল্পিত কৃষিচর্চা মাটির ক্ষয় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। একইভাবে কৃষি ও অন্যান্য কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। টেকসই কৃষির পাশাপাশি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র (ইকোসিস্টেম) সুরক্ষার জন্য মাটি ও পানি সম্পদের সামগ্রিক এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আমলে কৃষি উন্নয়নের যে ভিত্তি রচিত হয়েছিল, সেটিকে অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে কৃষিবান্ধব ও বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাণের সূচনা হয়েছে মাটি ও পানি থেকে। আবার সকল প্রাণিরই বেঁচে থাকার অবলম্বন এই মাটি ও পানি। পৃথিবী নামক এ গ্রহকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে রেখে যাওয়ার শাশ্বত অঙ্গীকারের প্রেক্ষিতে মাটি ও পানির গুরুত্ব অপরিসীম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর চাষাবাদ হয়েছে মাটির নিজস্ব উর্বর শক্তিতে। তখন প্রয়োজন ছিল না বাড়তি কোনো সার ও কীটনাশকের। মাটিতে বিদ্যমান অণুজীব, মাটি ও পানির সমন্বিত মিথস্ক্রিয়ায় মাটি থাকত উর্বর। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে।’
এছাড়াও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য বাড়তি খাদ্য চাহিদা মেটাতে ও শিল্পায়নের কারণে প্রতিনিয়ত মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মাটি ও পানির সঠিক ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উদ্ভিদের জন্ম-বৃদ্ধিতে ও মানবকল্যাণে মৃত্তিকার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতেই বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস নির্ধারণ করা হয়েছে। মৃত্তিকার সঠিক পরিচর্যার গুরুত্ব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মৃত্তিকা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন (আইইউএসএস) ২০০২ সালে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করে। পরে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অনুমোদন লাভের পর প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বের প্রায় ৬০ হাজারের বেশি মৃত্তিকাবিজ্ঞানী এ দিবসটি সাড়ম্বরে পালন করে থাকেন। মৃত্তিকা সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি এবং তার প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব এই বিজ্ঞানীদের। বিশ্বের সব দেশে সুস্থ মৃত্তিকার সুফল লাভে উৎসাহিত করতেই এ দিবস পালন করা হচ্ছে।
২০১৩ সালের জুনে, এফএও সম্মেলন বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের দিনটি ঠিক হয় এবং পরে ৬৮ তম জাতিসংঘ জাতীয় সাধারণ পরিষদের কাছে এই দিনটি পাঠানো হয় যাতে জাতিসংঘ ৫ ডিসেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্তিকা দিবস হিসেবে গ্রহণ করে।
পরে ২০১৩ সালের শেষের দিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪ কে প্রথম সরকারি বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস হিসেবে মনোনীত করে। বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস বা ওয়ার্লড সয়েল ডে ২০২৩ এর প্রচারাভিযানের লক্ষ্য হল ভালো ও স্বাস্থ্যকর ফসল পেতে মাটি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা সকলকে বোঝানো এবং পানি ও মাটির মধ্যে সম্পর্ক বোঝানোর জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ এই দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪১:৪১ ৩৯ বার পঠিত