ইংল্যান্ডের কন্ডিশনেও দারুণ পারফরম্যান্স বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। জুনিয়র ক্রিকেটারদের ভালো খেলাটা সিনিয়রদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমনটাই বলেছেন বিসিবি পরিচালক আকরাম খান। তবে সাবেক এ অধিনায়কের মতে, অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশ্বকাপ দলের জন্য বিবেচনায় রাখা উচিত।
খাতা-কলমের হিসেবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকে প্রাপ্তি ছিল কম। হারলে চারিদিকে হায় হায় রব উঠতো। সেটা এড়িয়ে যাওয়ার তাড়না তো ছিলই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিশ্বকাপের বছরে জয়ের অভ্যাস ধরে রাখা। আর সে কাজটা খুব ভালোভাবে করতে পেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
অ্যাওয়ে কন্ডিশনে বরাবর ভুগতে থাকা দলটাই, ইংল্যান্ড সফরে দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলা হয়েছে কার্টেল ওভারে। ৪৫ ওভারের ম্যাচেই ৩২০ রান তাড়া করে জিতেছে টাইগাররা। আর শেষ ম্যাচে চাপের মাঝে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বোলাররা। পুরো দলের এমন লড়াকু মনোভাব মুগ্ধ করেছে নীতি নির্ধারকদের।
বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান বলেন, ‘এত কমফোরটেবলি আমরা জিততে পারব কিনা, অনেকেই জিজ্ঞেস করেছিল। এই মৌসুমে ইংল্যান্ডের উইকেটটা কিন্তু অনেক ডিফিক্যাল্ট থাকে। কিন্তু এই কন্ডিশনে, এই উইকেটে বাংলাদেশ অনেক ভালো খেলেছে। এভাবেই যদি টিমটা খেলে, তবে সামনে আমাদের ভালো একটা সুযোগ আছে ওয়ানডে বিশ্বকাপে, ভারতে যেখানে আমাদের মতো কন্ডিশনেই খেলা হচ্ছে।’
অফফর্মের কারণে যে নাজমুল হোসেন শান্ত হয়ে উঠেছিলেন গলার কাঁটা, তিনিই এখন টপ পারফর্মার। আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজে ৬৫’র বেশি গড়ে ১৯৬ রান করে জিতেছেন সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার। সময়টা দারুণ কাটছে এই ব্যাটসম্যানের। সবশেষ বিপিএলের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতেও ছিলেন ম্যান অব দ্য সিরিজ। শান্ত বন্দনা চারিদিকে।
শুধু শান্তই নন, পেসারদের সাম্প্রতিক ফর্মও আশা জাগাচ্ছে। চেমসফোর্ডের শেষ ওয়ানডেতে হাসান মাহমুদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং কিংবা মোস্তাফিজের ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্সের পর ম্যানেজমেন্ট বলতে পারছে- শুধু সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর নির্ভরশীল নয় এই বাংলাদেশ দল।
আকরাম বলেন, ‘বছর দুই-তিন থেকেই নতুন আসা কিছু তরুণ খেলোয়াড় দারুণ খেলছে। এমন কিছু খেলোয়াড় আছেন যাদের সম্ভাবনা অনেক বেশি। যাদের দেখলেই বোঝা যায়, এরা বাংলাদেশের অনেক বড় খেলোয়াড় হবে। তাদের একজন ছিলেন শান্ত। সে কিন্তু এখন অনেক ভালো করছে। লিটন গত দুই-তিন বছরে ভালো করেছে। এটা ঠিক যে, আগে যেমন ধারণা ছিল সিনিয়র খেলোয়াড়রা যদি ভালো না খেলে তবে আমরা ভালো করতে পারব না। আবার আমাদের ব্যাটাররা যদি রান না করে তবে আমরা জিততে পারব না। এখন ওই জিনিসটায় পুরোপুরি পরিবর্তন চলে আসছে। এখন আমাদের ফাস্ট বোলাররা কিন্তু ম্যাচ জেতাচ্ছে। আমাদের তরুণ খেলোয়াড়রা রান করছে।’
তবে সিনিয়রদের একেবারে ফেলে দেয়ার পক্ষে নন আকরাম। ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। চান্ডিকা হাথুরুসিংহে জানিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে চান। সেই এক্সপেরিমেন্টের অংশ হিসেবেই দলের বাইরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পাঁচশ’র বেশি রান করা এই ক্রিকেটারকে ছাড়া বিশ্বকাপের দল সাজানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করেন বিসিবি পরিচালক।
আকরাম বলেন, ‘অভিজ্ঞ খেলোয়াড় কিন্তু বিশ্বকাপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বিশ্বকাপের তিন-চার বছর আগে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তবে সেটা কিন্তু টিমের জন্য ভালো। কিন্তু আপনি যদি একদম শেষ মুহূর্তে এসে এটা করেন তবে তা আপনার জন্য অনেক খারাপ হবে। এভাবে আমরা আগে অনেকবার অনেক খারাপ করেছি। আর রিয়াদকে শুধু গত পাঁচ-ছয়টা ম্যাচ দিয়ে মূল্যায়ন করলে ভুল হবে। কারণ রিয়াদ এমন একজন খেলোয়াড় যে গত দশ বছর বাংলাদেশ দলের জন্য চমৎকার খেলে আসছে। তার অভিজ্ঞতা জিনিসটা আছে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজেই মাহমুদউল্লাহ ও আফিফের মতো পরীক্ষিতদের দলে ফেরার আশা সাবেক ক্যাপ্টেনের।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৮:৫৬ ৬৫ বার পঠিত