দারুন এক উজ্জীবিত পারফরমেন্সের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফেরা স্মরণীয় করে রাখলো আর্সেনাল। বুধবার তারা পিএসভি আইন্দোভেনকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে।
ছয় বছরে প্রথমবারের মত ইউরোপীয়ান এলিট ক্লাব প্রতিযোগিতায় ফিরে এসে নিজেদের আধিপত্য প্রমান করেছে গানার্সরা। ডাচ লিগ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে আর্সেনাল দাপুটে খেলা দেখিয়েছে।
এমিরেটস স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে বুকায়ো সাকার গোলে এগিয়ে যায় আর্সেনাল। এরপর ট্রোসার্ডকে দিয়ে ব্যবধান দ্বিগুন করিয়েছেন সাকা। গাব্রিয়েল জেসুসের ৩৮ মিনিটের তৃতীয় গোলের যোগানদাতা ছিলেন ট্রোসার্ড। বিরতির পর জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েছেন মার্টিন ওডেগার্ড।
গানার্স বস মিকেল আর্তেতা বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরে আসার রাতটা ছিল দুর্দান্ত। এখানকার পরিবেশও ছিল দেখার মত। ম্যাচের আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের থিম সং শুনে সকলেই আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এই সাহসিকতা ধরে রাখতে হবে। আমিও বেশ উত্তেজিত ছিলাম। কিন্তু নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করেছি। এই রাতটা আমাদের উপভোগ করার। ক্লাব ইতিহাসে এই ম্যাচটি সবসময়ই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
এর আগে ২০১৭ সালের মার্চে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলেছিল আর্সেনাল। শেষ ষোলর ঐ ম্যাচে গানার্সদের দুই লেগ মিলিয়ে ১০-২ গোলে বিধ্বস্ত করে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল বায়ার্ন মিউনিখ।
কিন্তু এবারের আর্সেনাল দলটি অনেক বেশী গোছানো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দীর্ঘদিন অনুপস্থিতি সত্ত্বেও গ্রুপ-বি থেকে পরের রাউন্ডে যাবার ক্ষেত্রে তারাই ফেবারিট। গ্রুপের অপর দুই দল হচ্ছে সেভিয়া ও লেন্স।
প্রিমিয়ার লিগে এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে চার জয় নিয়ে অপরাজিত রয়েছে আর্সেনাল। গত মৌসুমে শেষ মুহূর্তে এসে শিরোপা হাতছাড়া করা আর্সেনাল এবার আর সেই ভুল করতে চায়না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কখনোই শিরোপা জেতা হয়নি। আর্তেতার শিষ্যদের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স সেই আকাঙ্খা পূরণের চ্যালেঞ্জ যেকোন দলকে জানাতেই পারে।
আর্তেতা বলেন, ‘আমরা উভয় অর্ধেই দারুন ছন্দে ছিলাম। আর এটাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। যেদিন দলটি এভাবে খেলে সেটা উপভোগ করাও আনন্দের হয়। আজকের ম্যাচের ফিনিশিংটা অসাধারণ ছিল। এবারের মৌসুমে এখনো পর্যন্ত সবকটি ম্যাচ জেতা একটি দলের বিপক্ষে চার গোল দেয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু এখনো আমাদের কিছু বিষয়ে উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোচ হিসেবে এটাই আর্তেতার প্রথম ম্যাচ। আরো একটি ম্যাচে গোলরক্ষক ডেভিড রায়া কোন গোল হজম না করে আর্তেতার আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। ব্রেন্টফোর্ড থেকে ধারে খেলতে আসা রায়া নিয়মিত গোলরক্ষক এ্যারন রামসডেলের জন্য মূল দলের পজিশনটা ক্রমেই কঠিন করে তুলছে। গত রোববার এভারটনের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের ম্যাচটির পারফরমেন্সই রায়াকে কালকের ম্যাচে জায়গা ধরে রাখতে সহযোগিতা করেছে।
এমিরেটস স্টেডিয়ামে কাল ঝুম বৃষ্টিও আর্সেনাল ভক্তদের উত্তেজনাকে দমাতে পারেনি। গ্যালারির উচ্ছাস মাঠ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তাদের উদ্দীপনায় খেলোয়াড়রা নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আট মিনিটে সাকা আর্সেনালকে লিড এনে দেন। ওডেগার্ডের শট পিএসভি গোলরক্ষক ওয়াল্টার বেনিতেজ রুখে দিলে ফিরতি শটে পোস্টের কাছে দাঁড়ানো সাকা বল জালে জড়ান। ২০ মিনিটে সাকার নিখুঁত পাস থেকে ট্রোসার্ড প্রথম সুযোগেই বেনিতেজকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুন করেন। ৩৮ মিনিটে পিএসভির রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন জেসুস। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২২ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার। এ সপ্তাহেই জেসুস জানিয়েছেন ছোটবেলায় মাঝে মাঝে স্কুল ফাঁকি দিয়ে টেলিভিশনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যাচ দেখেছেন। তখন থেকেই এই টুর্নামেন্টে খেলার স্বপ্ন ছিল জেসুসের। ট্রোসার্ডের দুর্দান্ত ক্রসে জেসুস আট গজ দুর থেকে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান। ২০১৪ সালে গ্যালাতাসারের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোন ম্যাচের প্রথমার্ধে আর্সেনাল তিন গোল দিল। ৭০ মিনিটে ২০ গজ দুর থেকে শক্তিশালী শটে ওডেগার্ড গোল করলে বড় জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যাত্রা নিশ্চিত হয় আর্সেনালের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩২:২২ ৪৩ বার পঠিত