প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রয়োজনীয় তহবিল বিতরণ করে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ধনী দেশগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। অনেক দেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে। তাদের সহায়তা প্রয়োজন।’ তিনি নগরীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকসিলারেটিং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, সিআরআই, সুচনা ফাউন্ডেশন ও চ্যাথাম হাউস লন্ডনের মতো বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ইভেন্টের দুটি অংশ ছিল। প্রথম অংশে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও বিশেষজ্ঞদের প্রশোত্তরপর্ব। মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ে ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালকের উপদেষ্টা এবং চ্যাথাম হাউস কমিশনের ইউনিভার্সাল হেলথ বিষয়ক সম্মানিত কমিশনার সায়মা ওয়াজেদ এটি পরিচালনা করেন। নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও চ্যাথাম হাউস কমিশনের কো-চেয়ার হেলেন ক্লার্ক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব ক্ষেত্রে এখনও উন্নয়ন হয়নি বা যেগুলো স্বাস্থ্যের দিকে খুব বেশি অগ্রগতি করতে পারেনি, সেখানে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিকে সহায়তার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য তহবিল গঠন করা উচিত। কারণ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।’ সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া এবং একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা করা উচিত।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরপর বোঝা যাবে কোন দেশের বেশি প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘এটি নির্দিষ্ট করা যেতে পারে এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সকলকে একসাথে এটি করতে হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইউএইচসি বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের সদস্য ও যুব নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
কীভাবে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়, সায়মা ওয়াজেদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। এ বিষয়ে আরো গুরুত্ব দেয়া এবং একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দেশের বেশি প্রয়োজন তা চিহ্নিত করতে হবে এবং এভাবে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন ,‘তবে আমি মনে করি আমাদের সকলকে একসাথে এটি করতে হবে।’
শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দেন।
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০ ধরনের ওষুধ ও ইনসুলিন দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মায়েদের প্রসূতি ও প্রসব-পরবর্তী সেবা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নার্স, চিকিৎসক ও প্রশিক্ষণ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করছেন।
তিনি উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সেবার মান বৃদ্ধি, বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
‘এভাবে, আমরা স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছি,’-উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এ সব ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনগণের জন্য স্যানিটারি ল্যাট্রিন এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছে ।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা মানে শুধু চিকিৎসা বা ওষুধ দেয়া নয়, একই সাথে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
স্বাস্থ্য খাতে সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না যে বিপুল জনসংখ্যার একটি দেশে এক টুকরো জমির ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন।
তিনি বলেন, ‘তবুও আমরা চেষ্টা করছি এবং আমরা তাৎপর্য্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি সব ধরনের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতে বাজেট-বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবারই তারা বাজেটের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, এমনকি এটা জিডিপিতে দুই শতাংশ হলেও আমরা এর চেয়ে অনেক বেশি দিচ্ছি।
তিনি চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে কর হ্রাস এবং সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিশুদের চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে কর অব্যাহতির বিষয়টি উল্লেখ করেন।
দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে আমরা অত্যন্ত সফল’।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালে দেশে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ শতাংশ, বর্তমানে তা কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চরম দারিদ্র্য ছিল ২৫ শতাংশের ওপরে, কিন্তু তা নেমে এসেছে ৫.৬ শতাংশে, এটা স্থির থাকবে না। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সবার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে কেউ আর দরিদ্র থাকবে না।’
সেবা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৯:৪৩ ৫৪ বার পঠিত