বাংলাদেশের পর ‘বি’ গ্রুপ থেকে এশিয়া কাপের সুপার ফোর খেলা নিশ্চিত করেছে চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা। আজ গ্রুপের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং সত্ত্বেও শ্রীলংকার মাত্র ২ রানে হেরে গেছে আফগানিস্তান। ২ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে শ্রীলংকা। ২ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্স-আপ হয়ে সুপার ফোর পর্বে খেলবে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে আগেই সুপার ফোর নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশ। ২ ম্যাচের ২টিতে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে এবার এশিয়া কাপ শেষ করলো আফগানিস্তান।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় দারুন সূচনা করে শ্রীলংকা। ৬২ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়ে দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও দিমুথ করুনারতেœ। ১১তম ওভারে করুনারতœকে ৩২ রানে বিদায় দিয়ে আফগানিস্তানকে প্রথম উইকেট উপহার দেন পেসার গুলবাদিন নাইব।
কিছুক্ষণবাদে আবারও শ্রীলংকা ব্যাটিং লাইন আপে জোড়া আঘাত হানেন নাইব। নিশাঙ্কাকে ৪১ ও সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ৩ রানে শিকার করেন তিনি। এতে ৮৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলংকা।
এ অবস্থায় বড় জুটির চেষ্টা করে সফল হন কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালঙ্কা। চতুর্থ উইকেটে সেঞ্চুরির জুটি গড়েন তারা। এতে দলের রান ১৮৮তে পৌঁছে যায়। আসালঙ্কাকে ৩৬ রানে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার রশিদ খান। ৯৯ বল খেলে ১০২ রান তুলেন কুশল-আসালঙ্কা জুটি। এই জুটিতেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন কুশল।
হাফ-সেঞ্চুরি পর দলের রানের চাকা সচল রেখে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কুশল। কিন্তু ৪০তম ওভারে রান আউটের ফাঁদে পড়ে নাভার্স নাইন্টিতে বিদায় নেন কুশল। ৮৪ বল খেলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯২ রান করেন তিন নম্বরে নামা কুশল।
দলীয় ২২৬ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে কুশলের বিদায়ের পর লোয়ার অর্ডারে দুনিথ ওয়েলালাগে ও থিকশানার দুর্দান্ত জুটিতে বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় শ্রীলংকা। অষ্টম উইকেটে ৬৩ বলে ৬৪ রানের জুটি করেন তারা। ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯১ রান করে লংকানরা।
৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৯ বলে অপরাজিত ৩৩ রান করেন ওয়েলালাগে। ইনিংসের শেষ বলে আউট হবার আগে ২টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারিতে ২৪ বলে ২৮ রান করেন থিকশানা। আফগানিস্তানের সফল বোলার নাইব ৬০ রাানে ৪ উইকেট নেন।
সুপার ফোর খেলতে হলে শ্রীলংকার ছুঁড়ে দেয়া ২৯২ রানের টার্গেট ৩৭ দশমিক ১ ওভারে স্পর্শ করতে হতো আফগানিস্তানকে। কিন্তু ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি আফগানদের। ২৭ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় তারা। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৪ ও ইব্রাহিম জাদরান ৭ রানে পেসার কাসুন রাজিথার শিকার হন।
পিঞ্চ হিটার হিসেবে তিন নম্বরে নেমে ৪টি চারে ১৬ বলে ২২ রান করেন নাইব। দলীয় ৫০ রানে নাইবের বিদায়ের পর চতুর্থ উইকেট ৬৩ বলে ৭১ রান তুলেন রহমত শাহ ও হাসমতুল্লাহ শাহিদি। ৪০ বলে ৪৫ রান করা রহমতকে ফিরিয়ে শ্রীলংকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন রাজিথা।
১৯তম ওভারে দলীয় ১২১ রানে রহমতের বিদায়ে উইকেটে এসেই বিধ্বংসী রুপ দেখান মোহাম্মদ নবি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৪ বলে ওয়ানডেতে ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন নবি। একই সাথে যা আফগানিস্তানের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি।
হাফ-সেঞ্চুরির পরও ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেন নবি। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ৬৫ রানে নবিকে শিকার করে শ্রীলংকাকে খেলায় ফেরার পথ দেখান স্পিনার মহেশ থিকশানা। ৩২ বল খেলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন নবি।
নবি ফেরার পর ক্রিজে এসে ১৩ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলেন করিম জানাত। ৩২তম ওভারে জানাতসহ শাহিদিকেও শিকার করে ম্যাচের লাগাম টেনে ধরেন স্পিনার ওয়েলালাগে। ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৬৬ বলে ৫৯ রান করেন শাহিদি।
জানাত-শাহিদির বিদায়ের পর ম্যাচ জিততে ৩২ বলে ৫৫ রান দরকার পড়ে আফগানিস্তানের। অষ্টম উইকেটে ২৩ বলে ৩৯ রান যোগ করে আফগানিস্তানকে জয়ের পথে রাখেন নাজিবুল্লাহ জাদরান ও রশিদ খান। ৩৬তম ওভারের চতুর্থ বলে ১৫ বলে ২৩ রান করা জাদরানকে থামিয়ে শ্রীলংকাকে লড়াইয়ে রাখেন রাজিথা। এরপর ১০ বলে ১৬ রান দরকার পড়ে আফগানিস্তানের।
ওয়েলালাগের করা ৩৭তম ওভারে ৩টি চারে ১২ রান নেন রশিদ। এমন অবস্থায় ম্যাচ জিততে শেষ বলে ৩ রান দরকার পড়ে আফগানদের। ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে মুজিবকে শিকার করে শ্রীলংকার সুপার ফোর নিশ্চিত করেন স্পিনার ধনাঞ্জয়া। একই ওভারের চতুর্থ বলে আফগানিস্তানের শেষ ব্যাটারকে শিকার করে শ্রীলংকার জয়ও নিশ্চিত করেন ধনাঞ্জয়া। ৩৭ দশমিক ৪ ওভারে ২৮৯ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। রশিদের ১৬ বলে ২৭ রানের অনবদ্য ইনিংসটি বৃথা যায়। শ্রীলংকার রাজিথা ৪ উইকেট নেন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সুপার ফোর পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে শ্রীলংকা।
বাংলাদেশ সময়: ০:০০:০১ ৭৮ বার পঠিত