নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে সমুদ্র খাতের ভিত্তি রচনা করেছিলেন। নাবিকরা আমাদের নৌ বাণিজ্যের প্রাণ। তারা বিশ্বের সমুদ্র জুড়ে পণ্যের নির্বিঘ্ন সরবরাহ নিশ্চিত করে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধি চালায়। শিল্পের স্টেকহোল্ডার হিসাবে সামনের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলির জন্য আমাদের নাবিকদের তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব।
এই সেমিনার বাংলাদেশি নাবিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো এবং মেরিটাইম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান বাড়াতে সহায়তা করবে।
আজ শুক্রবার সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ মেরিন কমিউনিটি, সিঙ্গাপুর (বিএমসিএস) আয়োজিত “নেভিগেটিং সিফেয়ারার শর্টেজ- বাংলাদেশে’স প্রসপেক্ট ইন মেরিটাইম এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম এমপ্লয়ারস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন বেলাল আহমেদ। অনলাইনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রাম’র কমান্ডেন্ট ড. সাজিদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেরিন কমিউনিটি সিঙ্গাপুর’র প্রেসিডেন্ট সারোয়ার দিতো। সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
সেমিনারে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন জাহাজের মালিক জাহাজের ব্যবস্থাপক, মেরিন ক্যাডেট ও নাবিক নিয়োগকারী বাংলাদেশি বিভিন্ন এজেন্সি, ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সিঙ্গাপুর মেরিটাইম অফিসার্স ইউনিয়ন, সিঙ্গাপুর শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন মেরিন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মেরিটাইম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সম্ভাবনা, জাহাজে অধিকসংখ্যক বাংলাদেশের মেরিনার নিয়োগ ও নতুন কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা হয়।
বাংলাদেশি নাবিকদের প্রয়োজনীয় চাহিদাকে লক্ষ্য রেখে এধরনের সেমিনারে আয়োজন করায় প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ মেরিন কমিউনিটি সিঙ্গাপুর (বিএমসিএস)কে ধন্যবাদ জানান।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এ টেকসই উন্নয়নে নৌ ও নৌপরিবহন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে স্বীকৃত। ক্রমবর্ধমান জাতীয় পতাকাবাহী জাহাজের জন্য বাংলাদেশি নাবিকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই নাবিকরা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির জন্য বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা আমাদের লক্ষ্য। নৌ সেক্টরে লিঙ্গ সমতা উন্নীত করার জন্য আমরা ২০১২ সালে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে মহিলা ক্যাডেটদের অন্তর্ভুক্তি শুরু করেছিলাম। আমাদের সরকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন-যেমন স্ট্যান্ডার্ড ট্রেনিং সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচকিপিং (এসটিপিডব্লিউ) কনভেনশন এবং এমএলসি ২০০৬ মেনে চলছে। দক্ষ নাবিকদের ক্রমবর্ধমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে আমরা চারটি নতুন মেরিন একাডেমি এবং একটি নাবিক ক্রু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা বিশ্বের নবম মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিও প্রতিষ্ঠা করেছি। আন্তর্জাতিক শিপিং কম্পানিতে এমনকি জাতিসংঘের সংস্থাগুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশী মেরিনাররা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে।
তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসিত জাহাজ এবং শূন্য-কার্বন জ্বালানি প্রবর্তনের মাধ্যমে সামুদ্রিক শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। আমরা আমাদের মেরিন একাডেমিতে ই-লার্নিং-ভিত্তিক মেরিটাইম এডুকেশন এবং সিমুলেটর-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ চালু করার মাধ্যমে এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলছি। এই প্রযুক্তিগত একীকরণ আমাদের সেক্টরে দক্ষতা এবং প্রতিযোগিতা বাড়াবে। ২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর স্বপ্নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের দেশের সামুদ্রিক শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দিতে নিয়ে যেতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১২:১২ ৪৯ বার পঠিত