রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীলতা হারালে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যে দর কষাকষির সুবিধা হারাতে পারে বাংলাদেশ। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এভাবেই সতর্ক করছেন অর্থনীতিবিদরা। এরমধ্যে আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি প্লাস পাওয়ার পথে মার্কিন কোনো কৌশল যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে সজাগ থাকার তাগিদ ব্যবসায়ী নেতাদের।
বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ ভাগ আসে তৈরি পোশাক থেকে। সেই পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির ৫০ দশমিক ৪২ শতাংশ হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আর ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।
তবে বাজার দু’টির পার্থক্য হলো- জোটবদ্ধ ইউরোপের ২৭ দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যায় বিনাশুল্কে আর স্বপ্লোন্নত দেশ হওয়া স্বত্ত্বেও মার্কিন মুল্লুকে কখনও মেলেনি শুল্কমুক্ত সুবিধা। এরমধ্যে আবার ২০১৩ সালে এক শিল্প দুর্ঘটনার (রানা প্লাজা ধস) জেরে বাংলাদেশি অন্যান্য পণ্যে দেয়া জিএসপিও বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোনো সময়ে তৈরি পোশাকের জন্য কোনো জিএসপি বা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাইনি। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের এ সুবিধা দিয়েছে।’
আবারও আলোচনায় জিএসপি। আগামী বছরই এই বাণিজ্য সুবিধার নতুন স্কিম নিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেই আইনেও যেন তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশেষ সুবিধা অব্যাহত থাকে, সেটির জন্য তদবিরও চলছে জোরেশোরে।
তবে এরই মধ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হচ্ছে। যা পোশাক খাতকে বেকায়দায় ফেলতে পারে বলে সতর্ক করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নতুন একটি মাত্রা তৈরি হয়েছে। যার কারণে হয়তো আমরা আগে যত শক্তভাবে দেনদরবার করতে পারতাম, এখন সেটি করার ক্ষমতা খানিকটা কমে গেছে।’
এদিকে ব্যবসায়ীরাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়ই না; সেখানে রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হলে ইউরোপের বাজারে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার পথে বাধা হতে পারে মার্কিন নীতি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে আমাদের রাজনৈতিক বিষয়টি রয়েছে, সেটির সঙ্গে আমাদের আমদানি-রফতানি সম্পর্কযুক্ত নয়। এটি আগেও হয়নি। এখনও হবে না বলে আমরা আশা করি। তবে ইইউর মাধ্যমে তারা কিছু চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে পারে। কারণ বর্তমান যে জিএসপি প্লাসের নীতিমালা রয়েছে, সেটিতে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যেটি আমরা মেনে চলি না। সুতরাং, সেখানে হয় তো তারা একটি ভূমিকা পালনের চেষ্টা করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
এক্ষেত্রে সতর্কতা হিসেবে ইইউর সঙ্গে মতবিনিময় বা অবস্থান সব সময়ে পরিস্কার রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ অবস্থায় ভূ-রাজনীতির গতি বুঝে অর্থনৈতিক স্বার্থ সামনে রেখে সুবিধা আদায়ের রাজনৈতিক কৌশল সাজানোর তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাজারটিতে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে জিএসপি’র ইবিএ (অস্ত্র ছাড়া বাকি সব পণ্য) ক্যাটাগরিতে থাকায় বাংলাদেশকে পণ্য রফতানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। অবশ্য চলতি বছরই শেষ হতে যাচ্ছে ইইউ’তে চলমান ১০ বছর মেয়াদী জিএসপি আইন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন আইন পাসের অপেক্ষায় রয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও কাউন্সিলে।
এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, সদ্যবিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৫৫৮ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে ঠেকে ৪৬ হাজার ৯৯১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলারে। এরমধ্যে মধ্যে ২৫ হাজার ৭৩৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার এসেছে নিটওয়্যার রফতানি থেকে, যা ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া ২১ হাজার ২৫৩ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার এসেছে ওভেন পোশাক রফতানি থেকে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১০:৪৮ ৪৫ বার পঠিত