অস্থির নিত্যপণ্যের বাজারে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাছের দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। তবে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর, পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ও রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বেশ কয়েকমাস ধরে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ওঠানামা করছে। তবে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলা ব্রয়লার মুরগির বাজার এখন কিছুটা নিম্নমুখী। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে দাম কমেছে ১০ টাকা পর্যন্ত।
কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। গত সপ্তাহে যেটি বিক্রি হয়েছিল ১৮০ টাকা কেজিতে। আর বর্তমানে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ২৬০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে সরবরাহ বাড়ায় ও চাহিদা কিছুটা কম থাকায় দাম কমছে মুরগির। ইকরামুল নামে এক বিক্রেতা বলেন,
ঈদের পর থেকে বাজারে মুরগির চাহিদা কিছুটা কম। পাশাপাশি বেড়েছে সরবরাহের পরিমাণ। এতে দাম কমতে শুরু করেছে।
বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। দাম বাড়েনি ডিমেরও। বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
তবে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব ধরনের মাছের দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নদীর মাছের দাম।
সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি দেশি মাগুর ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার ৬০০ টাকা ও শোল ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিকেজি টেংরা ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৩০ টাকা, পাবদা ৭০০ থেকে ৮৫০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বাজারে আকারভেদে প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
ক্রেতারা জানান, বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। যা দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেলোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন,
বাজারে সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে মাছের দাম একটু বেশিই চড়া। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা সীমান্ত বলেন,
দেশি মাছের দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিকেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এভাবে চললে মাছ কিনে খাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।
আর বিক্রেতারদের দাবি, এবার তেমন একটা বৃষ্টি না হওয়ায়, বাজারে দেশি মাছের সরবরাহ কম। পাশাপাশি ঘেরের মাছগুলোও পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে না। এতে দাম কিছুটা বাড়তি।
ইসমাইল মোল্লা নামে এক বিক্রেতা বলেন, সপ্তাহ ব্যবধানে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেড়েছে মাছের দাম। সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে শুরু করবে।
এদিকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী সবজির বাজার। বেড়েছে বেশ কয়েকটি সবজির দাম। টমোটোর কেজি ছাঁড়িয়েছে ৩০০ টাকা। গত সপ্তাহে যেটি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। আর লাগামহীন কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিতে। দাম বেড়েছে পটোল ও বেগুনের। প্রতিকেজি পটোল ৫০ টাকা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
তবে দাম কমেছে করলা, ঢেঁড়স, পেঁপে, শষা ও আলুর। বাজারে প্রতিকেজি করলা ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শষা ৩৫ টাকা ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে টাকায়। আর গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া আলু ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলেন, প্রতিদিনই ওঠানামা করছে দাম। তবে দাম বাড়ার আসল কারণ জানেন না তারা। পাইকারি পর্যায়ে দাম বেশি থাকায়; খুচরাতেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সাইদুল হক নামে এক খুচরা বিক্রেতা বলেন,
আই হ্যাভ নো আইডিয়া। বাজারে কেন দাম বাড়ছে আমরা জানি না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভালো বলতে পারবেন। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে, তবু দাম বেশি।
পাইকারি ব্যবসায়ী নাইমুর বলেন, আড়তগুলো সবজির তেমন একটা সরবরাহ নেই। তাই দাম বেশি। আসলে মাঠ পর্যায় থেকে পর্যাপ্ত যোগান মিলছে না।
এদিকে দাম কমেছে পেঁয়াজ ও আদার। বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। কেজিতে দাম কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর প্রকারভেদে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২৫০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি বাড়ায় ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকায় দাম কমছে। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের মের্সাস দি পানামা ট্রেডার্সের মালিক মো. দুলাল প্রামাণিক বলেন, আড়তগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। আর মানভেদে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন,
ভারত থেকে আমদানি অব্যাহত থাকায় দাম কমছে। আমদানি আরও বাড়ালে দাম আরও কমে যাবে। তবে খুচরা পর্যায়ে সিন্ডিকেটের কারণে ৪৫ টাকার মরিচ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নজরদারি বাড়ালে খুচরা পর্যায়েও কমবে দাম।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা স্বপন জানান,
আমদানি বেড়েছে পেঁয়াজের। এতে কমতে শুরু করেছে দাম। পাইকারিতে প্রতি ৫ কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। আর প্রতি ৫ কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়
তবে বাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী রসুনের দাম। প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আর ভারতীয় রসুন বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের মের্সাস ফয়সাল ট্রেডার্সের মালিক মো. ফয়সাল বলেন, আমাদানি বাড়ায় কমছে আদা ও ভারতীয় রসুনের দাম। তবে দেশি রসুনের সরবরাহ কম থাকায়; দাম কিছুটা বেশি।
এদিকে বাজরে কিছুটা নিম্নমুখী ডাল, আটা ও ময়দার দাম। আর নতুন দামের বোতলজাত সয়াবিন তেল এখনও বাজারে না এলেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, এখনও নতুন দামের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বাজারে আসেনি। খোলা সয়াবিন তেল এলেও মিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়ায় দাম বাড়তি।
এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় চলতি মাসের ১১ জুলাই দেশের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমিয়ে ১৭৯ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা কমিয়ে ১৫৯ টাকায় বিক্রির কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২২:১০ ৯২ বার পঠিত