
ধর্ষণের শিকার জুলাই আন্দোলনে শহীদ জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে উল্লেখ করে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে গণমাধ্যমে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘যে ভাই আমাদের এই নতুন বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তার মেয়ের সঙ্গে এমন নৃশংস ঘটনা সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এমনটা শুধু আমাদের এই বোন লামিয়া সঙ্গে নয়, পৃথিবীর কোনো বোনের সঙ্গেই কেউ প্রত্যাশা করেন না। কিছুদিন আগে আমাদের ছোট্ট শিশু আরেক বোন আসিয়াকে আমরা এভাবে হারিয়েছি।’
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, এই নৃশংস ঘটনার কারণে পুরো দেশ মর্মাহত। ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো নারীকে হারাতে না হয়।
এনসিপির এ নেতা বলেন,
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ আগামী দিনের বাংলাদেশে যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোতে থাকবেন, তাদের কাছে ধর্ষকের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। কারণ এমন অনেক জায়গা আছে, যে জায়গাগুলোতে এত সুশীলতা দেখিয়ে লাভ নেই।
‘একটা সময় বাংলাদেশে প্রচুর এসিড নিক্ষেপ হত। কিন্তু এসিড নিক্ষেপের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার পর এটা অনেক কমে গেছে। তাই এমন কিছু মানুষ আছে, যারা এটা ডিজার্ভ করে, তাদের বিরুদ্ধে সেই রকমই শাস্তি দিতে হবে, অ্যাকশন নিতে হবে’, যোগ করেন সারজিস।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এনসিপি এবং পুরো বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো, কিছু দিন আগে আমাদের বোন আসিয়ার সময় তারা যে ৯০ দিনের কথা বলেছেন, এটা আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে আগামী দিনে আমাদের কোনো বোন আসিয়া কিংবা লামিয়াকে হারাতে হবে না।’
কলেজের পরীক্ষা দেয়ার জন্য রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকালে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল লামিয়ার। সেজন্য আগের দিন শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটাও করেন। রাত ৮টার দিকে মা রুমা বেগম ছোট মেয়েকে নিয়ে বাসার পাশেই মাদরাসায় যান। সেই সুযোগে রাত ৯টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস দেন জুলাই আন্দোলনে শহিদ জসিম উদ্দিনের ১৭ বছরের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে লামিয়া। টের পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়ার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নে কলেজছাত্রী লামিয়া নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। পরে নিজেই বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন। এ ঘটনার পর লামিয়াসহ পুরো পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সামাজিক লজ্জা, চাপ ও নানা শঙ্কায় লামিয়া চরম হতাশায় ভুগছিলেন বলে জানায় শোকাহত পরিবার। মামলার পর আসামি সাকিব ও সিফাতকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে দুমকি থানা পুলিশ। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর আসামিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ পরিবারের।
ময়নাতদন্ত শেষে লামিয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৪:৩৫ ৫ বার পঠিত