ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনায় নিহত ৩২২ জন : যাত্রী কল্যাণ সমিতি

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারি » ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনায় নিহত ৩২২ জন : যাত্রী কল্যাণ সমিতি
বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫



ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনায় নিহত ৩২২ জন : যাত্রী কল্যাণ সমিতি

ঈদুল ফিতরের আগে-পরে সারা দেশের বিভিন্ন সড়কে ৩১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত হয়েছেন এবং ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ তথ্য জানিয়েছে।

সমিতি জানায়, একই সময়ে রেলপথে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৪টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত, ১ জন আহত এবং ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৩৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৫২ জন নিহত এবং ৮৩৫ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি জানান, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২৪ মার্চ থেকে ঈদের পরের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত এবং ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত ও ১৩৯৮ জন আহত হয়েছিলেন। আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ২১.০৫ শতাংশ, প্রাণহানি ২০.৮৮ শতাংশ এবং আহতের সংখ্যা ৪০.৪১ শতাংশ কমেছে।

সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত এবং ১৫৫ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪২.৮৫ শতাংশ, মোট নিহতের ৪৬.৮৯ শতাংশ এবং মোট আহতের ১৮.৭৬ শতাংশ।

এই সময়ে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৭০ জন চালক, ৪৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫০ জন পথচারী, ৬০ জন নারী, ৪০ জন শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ২০ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৬ জন শিক্ষক, ৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, একজন সাংবাদিকের পরিচয় মিলেছে।

সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩২.২৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬.৫৬ শতাংশ বাস, ১৪.৮৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ১৪.৪৩ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ৮.০৬ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭.২১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৬.৫৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

দুর্ঘটনার ২৭.৩০ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪২.২২ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১.৫৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে, ০.৩১ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ও ৮.৫৭ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৮.৪১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১.২৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৪.৬০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৪৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৬৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.৫৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। তবে এবার দীর্ঘ ছুটির কারণে ধাপে ধাপে বাড়ি ফেরার সুযোগ হওয়ায় ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা কিছুটা কমেছে বলে সংগঠনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো থাকায়, সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, হাইওয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছিল যাত্রীবান্ধব ও দৃশ্যমান। উল্লেখ্য, যাত্রীসাধারণ অসংগঠিত ও সচেতন না হওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি চরমে পৌঁছেছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে— দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা অবাধে চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; সড়কে মিডিয়ামে রোড ডিভাইডার না থাকা, অন্ধবাঁকে গাছপালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি; মহাসড়কের নির্মাণ ক্রটি, যানবাহনের ক্রটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন এবং বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশগুলো হচ্ছে— মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান; গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা করা; সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা; সড়ক পরিবহন আইন যথাযতভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা; উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা; মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া এবং ঈদের ছুটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, যুগ্ন মহাসচিব তাওহীদুল হক লিটন, অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, মোহাম্মদ আরিফ, মনজুর হোসের ইশা প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৮:১২   ১০ বার পঠিত  




ছবি গ্যালারি’র আরও খবর


পেটের ক্ষিধে ঠিকমতো মিটলে রাজনীতি সুন্দর হবে : সারজিস
চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসিয়ে খাগড়াছড়িতে ‘বৈসাবি’ উৎসব শুরু
তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সাক্ষাৎ
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনায় মোনাজাতে কাঁদলেন মানুষজন
রিশাদের দলের বিপক্ষে নেমেই পিএসএলে ইতিহাস গড়লেন হোল্ডার



আর্কাইভ